ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন, আতঙ্কে কয়েকটি গ্রামের মানুষ
২৫ জুন ২০২২ ০৯:৫৫
ময়মনসিংহ: জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আতঙ্কে থাকে কয়েক গ্রামের মানুষ। তাই দেশের একমাত্র এই নদের ভাঙান রোধে প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদর ও গৌরীপুরের প্রায় ৬ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের দুইপাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় কৃষকের ৪০ থেকে ৫০ হাত ফসলি জমি নদ গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে সবসময় আতঙ্কে রয়েছেন সদর উপজেলার চরনিলক্ষীয়া, গৌরীপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের খানপাড়া, খুলিয়ারচর, ভাটিপাড়া এবং খোদাবক্সপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শতশত কৃষক।
স্থানীয়রা জানান, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে টেকাই দায় হয়ে পড়বে। তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঘরবাড়িও বিলীন হয়ে যাবে। প্রতিবছর এমন হলেও প্রশাসন স্থায়ীভাবে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ না করলে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে বাড়িঘরও ভেঙে চলে যাবে নদের গর্ভে।
চরনিলক্ষীয়া গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষা আসলেই ব্রহ্মপুত্র নদের দু’পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। এ বছর বর্ষার আগে থেকেই ভাঙছে। বেশ কয়েকজনের ফসলি জমি নদের গর্ভে বিলীন হচ্ছে। প্রতিদিনেই একটু একটু করে ভাঙছে।’
গৌরিপুরের ভাংনামারীর গজারিয়া পাড়ার কৃষক নূর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘নদের পাড় ভাঙনের ফলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে অনেক জায়গায় ৪০ থেকে ৫০ হাত ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান কিছুটা উদ্যোগ নিয়ে ঘাটে কিছু মাটির বস্তা ফেলেছেন। তা তো সাময়িক সময়ের জন্য, এখানে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’
ভাটিপাড়ার ফাহিম ইসলাম বলেন, ‘জানামতে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটারে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন অল্প অল্প করে ভাঙছে যখন পুরো বর্ষায় দৈনিক ৫ থেকে ৭ হাত করে ভেঙে ভিতরে ঢুকবে। এ ভাঙনের কারণে জমিতে কোনো ফসলও করতে পারি না। কবে যে আমাদের বাড়ি-ঘর চলে যায় সে চিন্তায় রয়েছি। বেড়িবাধ না হলে আমাদের কোন রক্ষা নেই।’
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। ইতোমধ্যে ৫০ হাত ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে। আরও হয়তো ১০০ হাতের মতো ভাঙবে। আমরা প্রশাসনকে বারবার বলে আসছি বেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। বেড়িবাঁধ না দিলে আমাদের এলাকাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেযামুল হক বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড় ভাঙার কারণে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার ভাঙনের মাত্রা একটু বেশি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।’
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ জানান, ব্রহ্মপুত্র বড় নদ। তাই দুইপাড় ভাঙে। আমরা এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করি। তারা যদি উদ্যোগ না নেয় তাহলে আমাদের বেশি কিছু করার থাকে না।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইউনুস আলী বলেন, ময়মনসিংহের পাঁচ উপজেলার ১৬টি পয়েন্টে প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। গতবছরও গৌরীপুরে ব্যাপক হারে ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হয়। ভাঙন রোধ স্থায়ীভাবে নিরসন করার জন্য ৫৪৩ কোটি টাকা প্রকল্প বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্প মঞ্জুর হলে ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস