‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ভয় পেলে চলবে না, পদ্মা সেতু করবই’
২৫ জুন ২০২২ ১৩:১৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইদের দিনও পদ্মা সেতুতে এসেছিলাম। পদ্মার স্রোতে সেতুর যন্ত্রপাতি ভেসে যাচ্ছিল। নেত্রীকে ফোন করলাম। নেত্রী বললেন, ভয় পেলে চলবে না। পিছু হঠার সুযোগ নেই। পদ্মা সেতু আমি করবই। বঙ্গবন্ধুকন্যা তার সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। সে কারণেই পদ্মা পাড়ে আজ আপনারা উপস্থিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা আপস করেননি। তিনি নিজ প্রতিজ্ঞায় অটল থেকে দেখিয়ে দিয়েছেন, বাঙালি বীরের জাতি।’
আমি বলব, আবার যদি ইচ্ছা করে, ফিরে আসব দুঃখ সুখের ঢেউ খেলানো পদ্মা নদীর তীরে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নাম করতে চেয়েছিলাম। নেত্রী রাজি হননি। কিন্তু আমি বলতে চাই, যতদিন পদ্মা সেতু থাকবে, যতদিন এখানে চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, ততদিন শেখ হাসিনার নাম রয়ে যাবে। পদ্মা সেতুতে শেখ হাসিনার নাম নেই। কিন্তু আপনাদের হৃদয়ে শেখ হাসিনার নাম গেঁথে থেকে যাবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা বলেন পদ্মা সেতুতে এত টাকা, এত টোল, তারা জানেন না এই অঞ্চলের মানুষের কত দুঃখ, কত যন্ত্রণা। তারা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না।’
শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাওয়া প্রান্তে টোল পরিশোধ শেষে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের আগে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি মাওয়ায় স্থাপিত টোল প্লাজায় টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতু এলাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে জাজিরা প্রান্তে সমাবেশে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কোটি মানুষকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের পরপরই দাবি ওঠে পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের। তবে প্রমত্তা পদ্মাকে বাগে এনে এর বুকে ইস্পাত-কংক্রিটের কাঠামো নির্মাণ সহজ ছিল না। সেই প্রকৌশল দিক বাদ দিলেও পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়েও তৈরি হয় প্রতিবন্ধকতা।
১৯৯৮-৯৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ১২ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্ব চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি সেতু প্রকল্পের। ওয়ান-ইলেভেনখ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবশ্য সেতুটির প্রথম প্রকল্প একনেকে পাস করা হয়। ২০০৯ সালে সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তাব। প্রথম দফায় সংসদে সেতুর ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। শর্তসাপেক্ষে এ প্রকল্পে আবার ফেরতও আসে বিশ্বব্যাংক। তবে ২০১৩ সালের ৪ মে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তা প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালের ১২ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। এরপর দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর স্প্যানে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শুরু হয়। সড়কপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সবশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যানে পূর্ণ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট পদ্মা সেতুতে সবশেষ সড়ক স্ল্যাব স্থাপনের পর মূল সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয় ১০ নভেম্বর।
২০২২ সালের ১৭ মে পদ্মা সেতুতে যানচলাচলের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ‘পদ্মা সেতু’ নামকরণ করে সেতু বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২৯ মে।
শেখ হাসিনার হাত ধরে সর্ম্পণূ নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সাহস দেখিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধনের মাধ্যমেই আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ পরিচয়কে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার এক চক্র পূরণ হলো আজ।
সারাবাংলা/একে
পদ্মা নদী পদ্মা সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধন স্বপ্নের পদ্মা সেতু