পদ্মা পাড়ে মা-মেয়ের সেলফি
২৫ জুন ২০২২ ১৫:১৯
ঢাকা: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। উপলক্ষটা গোটা জাতির জন্যই উচ্ছ্বাসের। আর সেই উচ্ছ্বাসের মধ্যমণি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ হাতে উদ্বোধন করলেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেই উৎসবে তার সঙ্গী মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে এই উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেল মা-মেয়েকেও। সেলফিতে বন্দি হলেন দু’জন।
শনিবার (২৫ জুন) মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ শেষ করে টোল প্লাজার সামনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাটন টিপে উদ্বোধন করলেন পদ্মা সেতুর নাফলক এবং বঙ্গবন্ধু ও তার ম্যুরাল। ঠিক সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী আর তার মেয়েকে দেখা গেল সেলফি তুলতে।
দুপুর ১২টা ৮ মিনিটের দিকে টোল প্লাজার সেই মঞ্চের নিরাপত্তাবেষ্টনী থেকে কিছুটা দূরে সরে যান প্রধানমন্ত্রী। এসময় পুতুল এগিয়ে এসে তার মোবাইল ফোনটি দিয়ে মায়ের সঙ্গে সেলফি তোলেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের স্মৃতি ধারণ করে নেন মোবাইলে।
প্রধানমন্ত্রী নিজে এসময় মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও কলে সংযুক্ত হন পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে। পুতুলকেও ডেকে নেন, কথা বলিয়ে দেন তাদের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী যখন কথা বলছিলেন ভিডিও কলে, তখন পুতুলের হাতে দেখা গেল ডিজিটাল ক্যামেরা। তাতে মায়ের ছবি তোলেন তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাজিরায় জনসভার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
এই পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কোটি মানুষকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের পরপরই দাবি ওঠে পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের। তবে প্রমত্তা পদ্মাকে বাগে এনে এর বুকে ইস্পাত-কংক্রিটের কাঠামো নির্মাণ সহজ ছিল না। সেই প্রকৌশল দিক বাদ দিলেও পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়েও তৈরি হয় প্রতিবন্ধকতা।
১৯৯৮-৯৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ১২ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্ব চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি সেতু প্রকল্পের। ওয়ান-ইলেভেনখ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবশ্য সেতুটির প্রথম প্রকল্প একনেকে পাস করা হয়। ২০০৯ সালে সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তাব। প্রথম দফায় সংসদে সেতুর ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্ব ব্যাংক। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। শর্তসাপেক্ষে এ প্রকল্পে আবার ফেরতও আসে বিশ্ব ব্যাংক। তবে ২০১৩ সালের ৪ মে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালের ১২ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। এরপর দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর স্প্যানে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শুরু হয়। সড়কপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সবশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যানে পূর্ণ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট পদ্মা সেতুতে সবশেষ সড়ক স্ল্যাব স্থাপনের পর মূল সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয় ১০ নভেম্বর।
২০২২ সালের ১৭ মে পদ্মা সেতুতে যানচলাচলের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ‘পদ্মা সেতু’ নামকরণ করে সেতু বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২৯ মে।
শেখ হাসিনার হাত ধরে সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সাহস দেখিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধনের মাধ্যমেই আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ পরিচয়কে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার এক চক্র পূরণ হলো আজ।
সারাবাংলা/একে
পদ্মা সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল স্বপ্নের পদ্মা সেতু