Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বানের পানি কেড়েছে সবকিছু, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁইও

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুন ২০২২ ২১:২০

সিলেট থেকে ফিরে: যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। কতজনের ঘর বাড়ি পানিতে হারিয়ে গিয়েছে সেটির কোনো হিসাব নেই। কারও আবার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। এখন চলছে কোনোমতে বেঁচে থাকার লড়াই। ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকার দেখা গিয়েছে। নৌকা দেখলেই ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে ছুটে আসে বানভাসী মানুষ।

অতিরিক্ত ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের পানি আসায় সিলেটের সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পুরো সিলেট এখনও পানিবন্দি। সিলেটের জালালাবাদ থানার কান্দিগাও ১ নং ওয়ার্ডের কামাউরাকান্দি, জইঙ্কার কান্দি, চরের হাটি, শান্তিপুর ও মোল্লারপুর গ্রামে বানভাসী মানুষের আহাজারি যেন স্তব্ধ করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

আগেও কি এখানে পানি উঠতে জানতে চাইলে কামাউরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, ‘না ভাই। এটি সিলেটের একটি হাওর এলাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা পানিবন্দি। কেউ সহায়তা নিয়ে আসে না। দ্বিতীয় দিন একটি দল কিছু চিড়া দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার সহায়তা পেলাম। সরকারের কোনো ত্রাণও পায়নি। ঘর নেই। আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। এখনো ঘরে পানি। বিশুদ্ধ খাবার পানিও নেই।’

মোল্লারপুর গ্রামের বৃদ্ধা আছিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবারে ধান, চাল,গরু-বাছুর সব বানের পানি নিয়ে গিয়েছে। ঘরে থাকতে পারিনি। এর ওর বাড়িতে গিয়ে থাকছি। একটি আশ্রয়কেন্দ্র নেই। সরকার একটি আশ্রয়কেন্দ্র দিলে বন্যায় সময় একটু হলেও থাকতে পারতাম। সরকার আমাদের দিকে খেয়াল করে না। বন্যার সময় ব্রিজের ওপর গিয়ে থাকছি। বন্যায় সব গেছে গা। পরনে শুধু কাপড়টাই এখন আছে। এক সপ্তাহ পর ত্রাণ পেলাম।’

বিজ্ঞাপন

যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। চারিদিকে পানি মাঝখানে একটি ঘরের টিন আর কাঠের খাট পড়ে থাকতে দেখে নৌকা নিয়ে কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জইঙ্কারকান্দির বাসিন্দা আক্কাস আলী (৭৫)।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে ঘরের মধ্যে গলা সমান পানি উঠে যায়। সঙ্গে ঢেউ আর স্রোত তো আছেই। তিনদিন পরে আশেপাশের মানুষ এসে আমাদের উদ্ধার করে। গোটা চারদিন কোনো খাবার খেতে পারিনি। এখন ঘর নেই, জায়গাটাও আমার নিজের না। ভাগ্নের জায়গায় টিনের ঘর করে সন্তানদের নিয়ে প্রায় ১ যুগ ধরে থাকেন। ২ ছেলে আর ৩ মেয়ে, সবাই বিবাহিত। ছেলেরা কৃষি কাজ করে। এখন পরনে কাপড় আর ঘরে ৩ কেজি চাল সম্বল। ঘরে ধান ছিল, হাজার ৩ টাকা ছিল সবকিছু নিয়েছে পানি।’

 

মোল্লারপুর গ্রামে মাজেদা বেগম। ত্রাণের নৌকা দেখেন গলা সমান পানিতে ছোট নৌকা চালিয়ে ত্রাণ নিতে চলে আসেন। কত দিন পর খাবার পাচ্ছেন বলতেই সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবারে এই হাওরে কে কার খোঁজ নেয়। কেউ একটা পানি দেয় নাই। ঘর নাই, বানের পানিতে আমার সব শেষ। স্বামী নেই। ছেলেরা কৃষি কাজ করে। আমিও মরে যাব। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। মানুষ আমাগো খোঁজ নেয় না। আশেপাশে কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই। আমার ৬০ বছর বয়সে আগে এমন বন্যা হয়নি। কিভাবে বেঁচে আছি আল্লাহ মালিক ছাড়া কেউ বুঝবে না।’

এদিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পানি এখন কমতে শুরু করেছে। প্রথম দিকে যে পরিমাণ পানি ছিল সেটি এখন নেই। শহরে পানি উঠলেও সেটা এখন আর নেই। হাওর ও প্রত্যান্ত এলাকাগুলোতে এখনও পানি আছে। সেটি হয়ত নামতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। পানিবন্দি মানুষের পাশে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুরো দেশবাসী সহায়তা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি যে কোনো প্রয়োজনে সহায়তা করছে।’

সারাবাংলা/এসজে/একে

টপ নিউজ বন্যা বানের পানি সিলেটের বন্যা সুনামগঞ্জ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর