নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি
২৬ জুন ২০২২ ২০:২৯
নড়াইল: ১৮ জুন, শনিবার। ঘটনার শুরু ছিলো মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্ট নিয়ে। সেই পোস্টে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে তিনি লিখেছিলেন, “প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম”। এ পোস্টকে কেন্দ্র করেই ওঠে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ। এর জেরেই গুজব ছড়িয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই কলেজের ভারপ্রাপ্ত (পূর্বের) অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় পরানো হয় জুতার মালা।
ওইদিন ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ চত্বরে ঘোরানো হয়।
ঘটনার পরদিন ১৯ জুন দুপুরে মির্জাপুর কলেজের হল রুমে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি বিক্ষুদ্ধ জনতার সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
গ্রেফতার দেখানো হয় একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায়কে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। রোববার (২৬ জুন) নড়াইল সদর আমলি আদালতে তার বিরুদ্ধে পুলিশ পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করলেও মঞ্জুর করেননি আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির।
এছাড়া জুতার মালা গলায় পরানোর পর থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তার পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ছায়েদুর রহমান ও সদর থানার ওসি মো. শওকত কবীর।
পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অব্যাহতি দিয়ে ওই কলেজের শিক্ষক আকতার হোসেন টিংকুকে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘অধ্যক্ষের গলায় কেউ জুতার মালা পরিয়েছিল কি না, তা আমি দেখিনি। কলেজের বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কলেজ ভবন থেকে অভিযুক্তদের বের করে আনার সময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ হয়তো জুতার মালা পরানোর বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। জুতার মালা পরানোর দু’একটি ছবি দেখেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও