Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর্থিক খাতের লুটপাট থামানোই যাচ্ছে না: ফিরোজ রশীদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২২ ২১:১৩

ঢাকা: আর্থিক খাতের লুটপাট কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। তিনি বলছেন, আর্থিক খাত দেখলে মনে হয় টাকা চুরি কেউ দেখার নেই।

রোববার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য এসব কথা বলেন। এসময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, সুখে থাকা মানুষগুলো বোঝে না গরীবের দুঃখ-কষ্ট কী। আর স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো বোঝে না বাস্তবতা কত নির্মম, কত কঠিন। প্রথম শ্রেণি ধনাঢ্য শিল্পপতি। বাংলাদেশের মানুষের অর্থমন্ত্রী বাজেটে তেল আর জল এমন সূক্ষ্ণভাবে মিশিয়েছেন যে এটাকে আলাদা করা সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, মনে হয় ধনীদের চেহারা সামনে রেখে উনি বাজেট প্রণয়ন করেছেন। আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা দরকার সবার আগে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লুটেরাদের দখলে চলে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি যদি লাগামহীনভাবে এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে ধনী আর দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। আর্থিক খাত দেখলে মনে হয়, কেউ দেখার নাই। এখানে যে দেখার প্রতিষ্ঠান আছে— বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, অন্যান্য সংস্থা— তারা কিন্তু একদম নিরব, নিশ্চুপ। লুটপাট কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। কীভাবে পিকে হালদার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেল? বছরের পর বছর ব্যাংকিং খাত থেকে এই টাকা চুরি করেছে। এটা কি দেখার কেউ নাই?

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এটা তো এক দিনে হয়নি। অভ্যন্তরীণ অডিট তো প্রতি মুহূর্তে হয়। প্রতিটি সংগঠনে, ব্যাংকে অডিট হচ্ছে প্রতিদিন। তাহলে কীভাবে হলো? এই টাকা তো দেশে ফিরে আসবে না। এক পরিচালক আর এক ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছে। একে অন্যের সঙ্গে যোগসাজশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।

ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, একে আড়াল করার জন্য হঠাৎ করে দেখলাম গণতদন্ত কমিশন হলো, যাদের কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি নাই, সাংবিধানিক ভিত্তি নাই। তারা ২২০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দাখিল করল ১১৬ জন আলেমের নামে। তাদের কাছে কী আছে? এই আলেমদের কি ঢাকা শহরে বাড়ি-ঘর আছে? ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বাড়িধারা— কোথায় তাদের বাড়ি? লাখ লাখ হাজার হাজার কোটি টাকা তারা কোথায় পাচার করেছে? মানি লন্ডারিং মামলা তাদের বিরুদ্ধে কেন হবে? এই যে খোঁচা দেয়— সামনে আমাদের নির্বাচন— এদের পেছনে কি লোক আছে? এদের পিছে কি ভোট আছে? এরা ২২০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন করল, সারাদেশ ঘুরল করোনার মধ্যে দুই বছর ধরে। এই টাকা তারা কোথায় পেল? এই টাকার উৎস কোথায়— এটা জানতে চাই।

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব সমর্থন করে ফিরোজ রশিদ বলেন, আমাদের দেশের টাকা যা পাচার হওয়ার, হয়ে গেছে। অনৈতিক হলেও সমর্থন করি। যদি আনে ৭ শতাংশ না, ১২ শতাংশ দিয়ে আনুক। টাকা যেটা যায়, সেটা বাইরে থেকে আনা কঠিন।

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, পদ্মা সেতু কোনো রাজনৈতিক বিষয় না। এই সেতু গোটা বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের বিষয়। এই সেতু পৃথিবীতে আমাদের আর্থিক শক্তি ও সক্ষমতার বার্তা। এই বার্তা এরই মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, এটাই সবচেয়ে বড় গৌরব। এই সেতুকে কেউ কেউ উপহাস করে গোল্ডেন সেতু বলেছেন। পদ্মা ওপারে তিন কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চাবিকাঠি হচ্ছে এই পদ্মা সেতু। এই সেতুর সঙ্গে গোল্ডেন সেতুর তুলনা করা যায় না। এটা আমাদের কাছে হীরকের চেয়ে বেশি মূল্যবান।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে আমার চেয়ারম্যান (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) দায়িত্ব দিয়েছিলেন জোট করার জন্য। চার দলীয় জোট করেছিলাম বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলাম এবং ইসলামি ঐক্যজোট। এই চার দলীয় জোট করার পর এরশাদ সাহেব হঠাৎ করে চলে গেল। আমরা নামাজ পড়ে সালাম ফেরানোর আগে দেখি ইমাম সাহেব নাই। কোথায় যাব? এরশাদ সাহেব আরেকটা দল করলেন, আলাদা নির্বাচন করবেন। আমরা যখন নির্বাচনের নমিনেশন দেই, একদিন মান্নান ভূঁইয়ার বাসায় জামায়াতের মুজাহিদ সাহেব বললেন, আপনি তো ঢাকা-১০ আসনে (নির্বাচন) করবেন। আপনার জন্য সুসংবাদ আছে।

ফিরোজ রশীদ বলেন, আমাকে বললেন, ঢাকা-১০ আসনের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ-৩ (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আসন) আসনে নির্বাচন করবেন। আমি বলেছিলাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আছেন ওখানে, আমার পক্ষে সম্ভব না। পাস করাও সম্ভব না। আমাকে বললেন, আপনাকে দাঁড়াতে হবে ওখানে। ঢাকা আমরা করব, ওখানে আপনার দাঁড়াতে হবে। যত টাকা লাগে দেবো। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর রংপুরের আসনে একজন প্রার্থী দিয়েছি, আপনাকে গোপালগঞ্জে করতে হবে। আমি বললাম, দাঁড়ানো সম্ভব না। আমি দুঃখিত। এই সভা থেকে চলে যাচ্ছি। আমাদের এখানে গোলাম মোস্তফা সাহেব থাকুক।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

কাজী ফিরোজ রশিদ সংসদ অধিবেশন

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর