ঢাকা: রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বন্যার কবল থেকে এই অঞ্চল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
রোববার (২৬ জুন) ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন রেগুলেটর ও ড্রেনেজ আউটলেট স্ট্রাকচারগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই করার অনুষ্ঠানে এ আশঙ্কার কথা জানান ডিএনসিসি মেয়র।
মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় আশঙ্কা হচ্ছে ঢাকার পূর্ব দিক নিয়ে। একটু বৃষ্টি হলেই এ অংশে আমাদের নতুন যে ১৮টি ওয়ার্ড— এগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। এটা নিয়ে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আমি অনুরোধ করব, এটা যেন পশ্চিমাঞ্চলের মোহাম্মদপুরের মতো বেড়িবাঁধ না হয়ে যায়। এটা একটা বালতির মতো। এখানে এমন টেকনিক্যাল সল্যুশান করতে হবে, যাতে ভেতরে পানি না জমে, আবার বাইরেও পানি নিষ্কাশন করা যায়।
ঢাকা শহরের খালগুলোকে দখল মুক্ত করে নৌযান চালু করার আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল। বলেন, ঢাকা শহরের খালগুলোকে দখল মুক্ত করে নৌযান চালু করার উপযোগী করতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। নৌযান দিয়ে আমরা হাতিরঝিল থেকে কালাচাঁদপুর, কড়াইল বস্তি ও বনানী যেতে পারি— এ ধরনের মাস্টারপ্ল্যান করা আছে। হাতিরঝিল থেকে কালাচাঁদপুর যেতে আমাদের মাত্র ১০ মিনিট লাগবে। এখানে বাধা শুধু ৯টি ব্রিজ। আমরা প্রকল্পটি যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করতে পারব, ততই ভালো।
আতিকুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুরের ১৭৩ একরের রিটেনশন পন্ড ও দ্বিগুণ মৌজার গোঁড়ান চটবাড়ির আশেপাশের অনেকগুলো খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। এ কারণে বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশন করা যায়। এ কাজে ৫৯ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এছাড়া ২৪ কোটি টাকা খরচ করে রামপুরা পাম্প স্টেশনের জন্য নতুন পাম্প কেনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ওয়াসার কাছ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে যে পরীক্ষা হয়েছিল, সে পরীক্ষায় পাস করার সুবিধা পাচ্ছেন নাগরিকরা। এখন আগারগাঁও, মধুবাগ, নেভি হেডকোয়ার্টারের সামনে আর পানি জমছে না। যেসব এলাকায় পানি জমছে, সেখানে কুইক রেসপন্স টিমের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
এ দিন স্লুইসগেটের পাশাপাশি গোড়ান চটবাড়ি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাম্পহাউজ উত্তর সিটির কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম। বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কখন কাজ করবে, এ জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন বসে নেই। পানিপ্রবাহ যেন ঠিক থাকে, এ জন্য তারা নিজস্ব অর্থায়নে কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটির কাছে খাল ও নালা হস্তান্তরের পর সেগুলো পরিষ্কার, খনন, পুনঃখনন, সংস্কার ও দখল হয়ে জায়গা উদ্ধার করার ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জলাবদ্ধতা অনেক কম হয়েছে। আগে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। এখন সেই পরিস্থিতি নেই।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাসাবাড়িতে সেপটিক ট্যাংক নেই। বাড়ির মালিকেরা নিজেদের সুয়ারেজ লাইন সরাসরি খালে দিয়ে রেখেছেন। তাদের অনেকবার সতর্ক করা হলেও ফল সন্তোষজনক নয়। তাই সতর্ক করলেই হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেপটিক ট্যাংক না করলে সুয়ারেজ লাইন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ অন্যান্যরা।
এর আগে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রোববার (২৬ জুন) দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা স্লুইসগেটগুলোর দায়িত্বভার করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা ১১টি স্লুইসগেট দেখভালের দায়িত্বও উত্তর সিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।