Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেতু নির্মাণে গাফিলতি, বর্ষা এলেই বন্ধ হবে স্কুলে যাওয়া-আসা

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুন ২০২২ ০৮:১৫

মানিকগঞ্জ: মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ৬শ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে তিন হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের কেল্লাই খালের ওপর জরাজীর্ণ একটি সেতু। সাম্প্রতিক সময়ে সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পুরনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্বাচনের কাজও শুরু করেছিল প্রায় ৬ মাস আগে। কিন্ত কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে কে এন্টারপ্রাইজ নানা কারণ দেখিয়ে দফায় দফায় সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে। ধরি গতিতে নির্মাণ কাজ চলতে থাকায় এলাকার মানুষজন ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বর্ষা মওসুমে তাদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, কেল্লাই বাজার সংলগ্ন নেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। এর আগে খালের ওপর নির্মিত পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙার পর দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের কাজ করার কথা থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে গাফিলতির কারণে ৫-৬ মাসে একটি পিলার তৈরি তো দূরের কথা রডের খাঁচা এবং জালি তৈরির কাজও শেষ করতে পর্যন্ত পারেনি বলে এলাকাকাসীর অভিযোগ। লোহার রড দিয়ে পিলার তৈরির জন্য কিছু খাঁচা এবং জালি বানানো হলেও সেগুলোতে মরিচা ধরেছে । জঙ্গলের ভেতর পড়ে আছে সে সব খাঁচা।

বিজ্ঞাপন

সেতু নির্মাণে দায়সারা কাজ করায় গতি নেই বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিধিসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। পানির বর্তমান যে অবস্থা এতে করে সেতুর নির্মাণ কাজ যে কোনো মুহূর্তে থেমে যাবে এতে  সন্দেহ নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে তারা লোকসানের মুখে পড়েছে।

কেল্লাই মনসুর উদ্দিন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী খালেদ আল হাসান জানান, যখন পুরনো সেতু ছিল সেটির ওপর দিয়ে আমরা প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করায় আমরা খুবই খুশি হয়েছি। কিন্ত কবেনাগাদ সেতুটি নির্মাণ হবে জানি না। বর্ষা শুরু হয়ে গেলে খালের ওপর প্রচণ্ড স্রোত পড়বে। নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করা কঠিন হয়ে পড়বে এমকি স্কুলে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি করছি।

৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদ খান জানান, বর্ষার সময় খালে অনেক স্রোত থাকে। এতে আমাদের স্কুলে যাওয়া আসায় খুব ঝুঁকি হয়ে যাবে।

কেল্লাই ৫০ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পুরনো সেতু ভেঙে ফেলার পর থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেত অনেক দিন ধরেই সমস্যা হচ্ছে। সামনে বর্ষার সময় আরও বেশি সমস্যা হবে। আমাদের স্কুলে মোট ১৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একশ জনের ওপরে শিক্ষার্থীরা ওই সেতু দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করত। নতুন সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা খুবই দরকার। আর পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা করা না হলে বর্ষার সময় স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাবে।’

কেল্লাই মনসুর উদ্দিন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির উদ্দিন বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ কাজের কোনো গতি নেই। সামনে বন্যা কিংবা সামান্য বর্ষা হলে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতে পারবে না। নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতরা বলেছিল বাঁশের চালি দিয়ে অস্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ করে দেবে, সেটি কতটুকু সত্য জানি না। ৪৭০ জন শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই এই সেতু পার হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে থাকে। বর্ষায় খালের প্রচণ্ড স্রোত থাকে, সেক্ষেত্রে যাতায়াতে বিকল্প ব্যবস্থা না করা হলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

স্থানীয় ইউটি সদস্য আফসার মিয়া বলেন, ‘সেতু নির্মাণ কাজের সুবিধার জন্য সেতু সংলগ্ন কয়েকটি দোকানও ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর পুরো সেতুটি ভেঙে দেওয়া হলেও পাইলিং মিস্ত্রি আনা হলেও তারা প্রায় ২ মাস কাজ না করে বসে থাকার পর মালামাল গুটিয়ে চলে যায়। এভাবে আজ আসে কাল আসে বলে পাইলিং মিস্ত্রির দেখা পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে আমি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বারবার কথা বলেছি। কিন্ত কোনো কাজে আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৬শ ওপরে শিক্ষার্থী আছে। যারা এ সেতুর ওপর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি মানুষ সেতু দিয়ে পারাপার হয়ে যে যার কাজে আসা যাওয়া করে। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সেতু নির্মাণের অনুরোধ করি। সেতু নির্মাণ কবে শেষ হবে তা জানি না। তবে মানুষের যাতায়াতের জন্য ড্রাইভিশন রাস্তা করার জন্য অনুরোধও জানানো হয়েছে।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ নিয়ে ঠিকাদার নানা ধরনের তালবাহানা করে যাচ্ছে। থেমে রয়েছে নির্মাণ কাজ। এলাকার মানুষের সঙ্গে ঠিকাদাররা বাটপারি করে যাচ্ছে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেতু নির্মাণ তদরারকির দায়িত্বে থাকার নিজস্ব ইঞ্জিনিয়র শাহিন শেখ বলেন, ‘আরএলজনিত সমস্যার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। এছাড়া ড্রয়িং অনুাসারে একটি আরএল ছিল। পবর্তীতে সেই আরএল এবং ড্রয়িংটা রিভাইজ হওয়ার কারণে সেতু নির্মাণ কাজ বিলম্ব হচ্ছে। কাজের ক্ষেত্রে লোকবল কম ছিল। পাইলিংয়ে এক সেট লোকবল ছিল, দীর্ঘ দেড় মাস তাদের আমরা বিনা কাজে বেতন দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলাম। তারা পরবর্তীতে চলে যায়। এই সব গাফরতির কারণে কিছুদিন আমাদের কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে সে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরছি। দ্রুত কাজ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করব।’

কে কে এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার কবীর খান বলেন, ‘কাজ শুরু করতে গিয়ে পাশের আরেকটি ব্রিজের কারণে দুই-আড়াই মাস কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে সেতু নির্মাণের জন্য সব ধরনের প্রস্ততি রয়েছে। কাজও চলছে কিন্ত পানির কারণে সমস্যা হচ্ছে। সেতু নির্মাণ কাজে যে টাকা ধরা হয়েছে সেখানে আমাদের লোকশান হবে। রড, সিমেন্ট, পাথরের দাম যেভাবে বেড়েছে এতে আমাদের ২০-২৫ লাখ টাকা ভর্তুকি যাবে।’

ঘিওর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাকুর রহমান বলেন, ‘২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণে কাজ শুরু হওয়ার পর মাঝে সেতুর ডিজাইনের একটু পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে হাইট যা ছিল তা বাড়ানো হবে। যে কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়। এরইমধ্যে খালে পানি চলে আসার কারণে সমস্যা হচ্ছে। পানি চলে গেলে পুরোদমে কাজ শুরু করা হবে।’

সারাবাংলা/একে

মানিকগঞ্জ সেতু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর