Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১,৩১,৩৮৮ চাষিকে উন্নত পদ্ধতিতে পাট চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুন ২০২২ ১৯:২২

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪ লাখ ২০ হাজার পাট চাষিকে উন্নত পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট পচানোর কলাকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। চলমান এই প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৮ জন পাট চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৭ জুন) জাতীয় সংসদে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদে এ তথ্য জানান। অধিবেশনে প্রশ্ন টেবিলে উত্থাপন করা হয়।

একই প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবছর পাট মৌসুমে ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন পাটবীজের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বীজ বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও পাট অধিদফতরের মাধ্যমে উৎপাদন করে চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ বীজের চাহিদা স্থানীয় বাজার ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করে পূরণ করা হয়। বাজারে সরবরাহ করা বীজ গুণগতমানের হয় না বলে অনেক ক্ষেত্রে চাষীরা প্রতারিত হয়।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, গবেষণায় দেখা যায়— কেবল গুণগতমানের পাটবীজ ব্যবহার করে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফলন বাড়ানো সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার পাট বীজের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ভর্তুকি দিয়ে সমন্বিতভাবে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাটবীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের কাজ করে যাচ্ছে। একই লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন পাট অধিদফতর ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৪৫টি জেলার ২২৭টি উপজেলায় পাট চাষিদের বিনামূল্যে উন্নতমানের পাটবীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, রিবনার ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় চাষি পর্যায়ে গুণগতমানসম্পন্ন পাটবীজের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় পাটের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

পাটের মূল্য বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। তিনি বলেন, লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ১০০০ মণের বেশি পাট ১ মাসের বেশি সময় ধরে মজুত রাখতে পারবেন না। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাট ব্যবসা করতে পারবে না। পাট ব্যবসা কেন্দ্র ও বাজারে মনিটরিং জোরদার এবং জেলা/উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সহায়তায় অসাধু/অবৈধ পাট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পাটপণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ লক্ষ্যে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে সব স্তরে পাটপণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ২৫৩টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি পাটকল ৩২টি ও বেসরকারি ২২১টি। ইজারার মাধ্যমে সরকারি দুইটি পাটকলে উৎপাদন কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হয়েছে। ৯টি সরকারি পাটকল ইজারার জন্য দরদাতার অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড জারি করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই পাটকলগুলোতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন শুরু হবে। এছাড়াও দেশে বেসরকারি ১৬৬টি পাটকল চালু রয়েছে।

ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদে জানান, বস্ত্র, রেশম ও পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও বিপণন এবং এর প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্রের চাহিদা পূরণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশের বস্ত্র খাতকে যুগোপযোগী করা, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করা, টেকসই উন্নয়ন এবং বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য ‘বস্ত্র আইন, ২০১৮’ পাস হয়েছে। পাটজাত পণ্য রফতানিতে সরকার পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানির ওপর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করেছে।

তিনি বলেন, পাট পণ্য রপ্তানিতে ভারত সরকারের অ্যান্টি-ডাম্পিং প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে মেলায় অংশগ্রহণ, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচারণা, আন্তর্জাতিকমানের ওয়েবসাইট চালু করা, দেশে ও বিদেশে সভা ও সেমিনারে প্রতিনিধি পাঠানো এবং সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেএমসির অধীন বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম লিজ বা ইজারা পদ্ধতিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর চারটি এবং এ বছরের ১৫ জুন সাতটি সহ মোট ১১টি পাটকল লিজ/ইজারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চালুর জন্য নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিজ চুক্তি সম্পাদনের পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন চালু হয়েছে। এছাড়াও ৯টি পাটকলের লিজচুক্তি কার্যক্রম অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হবে।

লক্ষ্মীপুর-১আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের জুন থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৯০-৯১ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। এই সময়ে বিদেশে কাঁচা পাট রফতানির পরিমাণ ছয় থেকে সাত লাখ বেল। একই সময়ে পাটপণ্য রফতানির পরিমাণ প্রায় ছয়-সাত মেট্রিক টন।

সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মেরিনা জাহানের আরেক প্রশ্নের জবাবে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও তাঁত শিল্প ও তাঁত শ্রমিকদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য ‘তাঁতিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাতের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প এবং ‘তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি’ শীর্ষক দুইটি প্রকল্প/কর্মসূচির মাধ্যমে চলতি মূলধন সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিন আরও বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তাঁত শ্রমিক ও মালিকদের জন্য সরকার তথা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড থেকে বয়নপূর্ব ও বয়নোত্তর সেবাদানের লক্ষ্যে ‘তাঁত অধ্যুষিত এলাকায় তিনটি সার্ভিস সেন্টার স্থাপন (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শাহজাদপুর সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। তাঁতিদের বন্ধ তাঁত চালু করতে চলতি মূলধন সরবরাহে ‘তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি’র আওতায় অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত শাহজাদপুরের ১ হাজার ৭৬৫ জন তাঁতির মধ্যে ৩ হাজার ৮৩টি তাঁতের অনুকূলে ৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ‘তাঁতিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় শাহজাদপুরের ৬০০ জন দরিদ্র ও প্রান্তিক তাঁতির মধ্যে ১ হাজার ৯৮৩টি তাঁতের অনুকূলে ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী সংসদ অধিবেশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর