Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পদ্মা সেতুর কারণে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও বাড়বে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুন ২০২২ ১৮:৩৯

ঢাকা: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক বলেছেন, পদ্মা সেতু বাঙালির অহংকার, আত্মপ্রত্যয়, সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। এই সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। এই সেতুর কারণে অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির হারও বাড়বে। পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে শিল্পায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।

গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও স্বাধীনচেতা দৃঢ় নেতৃত্বে দেশীয় অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুটি ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অর্জন ও কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

তিনি বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা তার পিতার মতো আপসহীন, অটল ও অবিচল ছিলেন। কোনো চাপের কাছে শেখ হাসিনা মাথা নত করেননি। ২০১২ সালের ৮ জুলাই এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। জনগণের অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে।’ জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘বন্দর নগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, প্রবেশ ও নির্গমন, মহাসড়কের যানজট নিরসন এবং ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল (উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত) বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া পূর্বাচল থেকে ঢাকা শহরের সঙ্গে যোগাযোগে মেট্রোরেলের আরেকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। পাশাপাশি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা বাস র‌্যাাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে ঢাকা শহরের যানজট নিরসন হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ১৩ বছর ধরে যে গতিতে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে, তাতে দেশে একটি সুষম উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।’ এমনিভাবে ২০৪১ সালে একটি জ্ঞানভিত্তিক, সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সহায়ক হিসেবে ‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে; উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক জনবান্ধব, শিল্পবান্ধব ও উন্নয়নবান্ধব বাজেট পেশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে প্রধানমন্ত্রী বস্ত্রখাতসহ সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখার সাহসিক সিদ্ধান্ত নেন। ফলে বিশ্বব্যাপী চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় শ্রীলঙ্কা শিল্প-কলকারখানসহ সব কিছু বন্ধ রেখে আজ দেউলিয়া। কিন্তু করোনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণেই দেশ এক মহাবিপর্যয় কাটিয়ে উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

বস্ত্র খাতের সফলতা তুলে ধরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, “এক সময় এদেশের তৈরি ঢাকাই মসলিনের সারা বিশ্বে কদর ছিল। বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৭০ বছর আগে এই গৌরবময় ঢাকাই মসলিন হারিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে মসলিন সুতা তৈরির তুলার জাত উদঘাটন এবং তুলা দিয়ে ৭০০-১০০০ কাউন্টের সুতা তৈরিসহ মসলিন শাড়ি তৈরির প্রযুক্তি তাঁত বোর্ড উন্মোচন করেছে। দেশের সাধারণ তাঁতীদের মাঝে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ’ স্থাপন করেছি।”

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘একটি মসলিন শাড়ির জন্য প্রথমে সুতা তৈরি করতে হয়। পরে চলে বুনন কাজ। একটি মাঝারি মানের মসলিন শাড়ি তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লেগে যায়। ফলে শাড়ির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। আমরা চেষ্টা করছি, বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে মসলিনের স্বকীয়তা ঠিক রেখে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে।’

তিনি আরও বলেন, “পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ১২০ একর জমির উপর ‘শেখ হাসিনা তাঁত পল্লি’ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। তাঁতশিল্পে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের আগ্রহ বাড়াতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় তাঁতীদের কাপড় বোনা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। তাঁতীদের জন্য থাকবে আবাসিক ভবন, তাঁত শেড, ডরমেটরি, রেস্ট হাউজ, সাইবার ক্যাফে ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। পল্লিতেই সপ্তাহে দু’দিন তাঁতপণ্যের হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। হাটে সুতাসহ সবধরনের কাঁচামাল বিক্রি ও প্রদর্শন করা হবে। তাঁতের কাপড় বোনা থেকে শুরু করে পোশাক তৈরি ও বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।”

পাটমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) বিগত বছরগুলোতে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিত। দায়-দেনা ছাড়িয়ে গিয়েছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সরকারি সিদ্ধান্তে পাটকলগুলোর বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান ও পাটখাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ১ জুলাই থেকে বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি জুট মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে ২৫টি জুট মিলের সকল স্থায়ী শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ সমুদয় পাওনা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস্ লিমিটেড ও নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস্ লিমিটেডকে ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেওয়া হয়েছে। মিল দুটিতে ইতোমধ্যে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস্ লিমিটেড ও চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিলস্ লিমিটেড লিজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এর বাইরে ১৩টি জুটমিলের জন্য দ্বিতীয় ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেওয়ার কাজ চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি, আরও কয়েকটি মিল ভাড়াভিত্তিক লিজ দেওয়া সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন পাটপণ্যের উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে এসব পণ্যে রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে। নতুন করে এসব মিলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এবং এক্ষেত্রে অবসায়নকৃত শ্রমিকরা অগ্রাধিকার পাবেন।’

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ঢাকা শহরের ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের জন্য রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াসার অধিকৃত জায়গায় একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভক্ত চনপাড়াবাসী। যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও চনপাড়ার মানুষ নৌকায় ভোট দেয়। এখানকার মানুষ এক সময় ভূমির অধিকার না থাকার কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। নাগরিক সুবিধা জাতীয় পরিচয়পত্র, ন্যায্য মূল্যে চাল, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ সব সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত ছিলেন। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ভোটের অধিকার পায়। কিন্তু এখনও তারা দখলদারিত্বের ভিত্তিতে ভূমির অধিকার পায়নি।’ এ সময় তিনি চনপাড়া হতদারিদ্র্য মানুষের দখলদারিত্বের ভিত্তিতে ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) প্রকল্পের আওতায় মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ে পূর্বাচলের পাশে পিতলগঞ্জ মৌজায় মেট্টোরেল প্রকল্পের ডিপো র্নিমাণের কাজ চলমান আছে। এতে নারায়ণগঞ্জবাসী খুশি। ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলার মানুষ যাতে সহজে ঢাকায় এসে অফিস করে আবার বাড়ি যেতে পারে সেজন্য এই মেট্টোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এ প্রকল্পের আওতায় নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার জনগণ উপকৃত হবে না। তবে শীতালক্ষ্যার পশ্চিমপাড়ে রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা-গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গাউছিয়া এলাকায় প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করা হলে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মানুষ উপকৃত হবে।’ সেজন্য প্রকল্পটি দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান গোলাম দস্তগীর গাজী।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

গোলাম দস্তগীর গাজী পদ্মা সেতু বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীরপ্রতীক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর