Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের মুখে চুনকালি পড়েছে: রওশন এরশাদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২২ ১৯:২৭

ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বিএনপিকে ঈঙ্গিত করে বলেছেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের যারা বিরোধিতা করেছে তাদের মুখে চুনকালি পড়েছে।

বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, এত সমস্যা মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা নির্মাণ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মাসেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফ লাইন রূপে কাজ করবে। বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।’

বিরোধীদলীয় নেতা আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের বেশিরভাগ সময় আমরা পূর্ণ করেছি। দেশের সবকটি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি মনে করি, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচনটি হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও সুস্থ প্রতিযোগিতা মূলক একটি নির্বাচন, যা গণতন্ত্রের মূলনীতি। দেশের উন্নয়নের জন্য টেকসই গণতন্ত্রের প্রয়োজন। আর সে জন্যেই আমাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।’

২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট সম্পরকে বেগম রওশন এরশাদ বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রাক্কলিত ব্যয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। যদিও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ব্যয়ের প্রাক্কলন চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা বেশি হলেও অর্থনীতির আকার বিবেচনায় একে সম্প্রসারণমূলক বা উচ্চাভিলাষী না বলে কিছুটা রক্ষণশীল বলা যেতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জগুলো হলো— আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান। বেসরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে কর্মসৃজন। আমদানি সহনীয় পর্যায়ে রেখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বর্তমান পর্যায়ে ধরে রাখা। করের আওতা বৃদ্ধি করে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো ও বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো। এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর কৌশল নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘শেখ হাসিনা এক ফিনিক্স পাখির গল্পগাথা’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের বিভিন্ন অর্জনের তথ্য দিয়েছেন। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা দেশের ৫১ তম বাজেট প্রস্তাব করেছেন তিনি। তবে করোনা মহামারির সংকট কাটার আগেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের বাজারে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। করোনা মহামারি-পরবর্তী নতুন বিশ্বের সামনে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাবে সারা বিশ্বেই জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যমূল্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাংলাদেশে বেড়েছে অসহনীয়ভাবে। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। ডলারের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় আমদানি-রপ্তানি খাতেও পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। এমন এক বৈরী সময়ের মধ্যে সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ।’

বিজ্ঞাপন

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘অতিভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক ও স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সিলেট, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিপুল সংখ্যক রাস্তা বাড়িঘর এবং ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে আছেন। আমি মনে করি বন্যা মোকাবেলায় স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের যা দরকার তা হলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো যায়। ত্রাণ ও চিকিৎসা দলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পাঠানো দরকার।’

দীর্ঘমেয়াদে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যও সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত সাপেক্ষে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরমার্শ দেন তিনি।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদ জাপা পদ্মা সেতু বিএনপি বিরোধী দল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর