সিলেটে বৃষ্টি বাড়াচ্ছে আতঙ্ক, ফের বন্যার শঙ্কা
২৯ জুন ২০২২ ২০:৪৬
সিলেট: সুরমা, সারি, ধলাই ও ডাউকীর পানি কমায় স্বস্তি ফিরেছিল সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট এলাকায়। দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিল মানুষ। কিন্তু গত দু’দিনের ভারি বর্ষণ ঘরে ফেরা মানুষগুলোকে নতুন করে শঙ্কায় ফেলেছে। বাড়ি ফিরে সংসার সাজানোর পরিবর্তে তারা ফের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকেরই কাটছে নির্ঘুম রাত। বুধবার (২৯ জুন) বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে এরকম চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে, অথৈ পানিতে ভাসছে কুশিয়ারা অববাহিকার উপজেলা জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর। রাস্তাঘাট, বাড়িঘরে পানি থাকায় ছয়টি উপজেলার দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন না বানভাসিরা। নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এসব উপজেলার জনগণ নতুন করে পানিবন্দি হওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছেন। বাড়ি-ঘর থেকে পানি নামা শুরু হতে না হতেই নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বুধবার বিকেলের সর্বশেষ রিডিংয়ে জানা গেছে, কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেটে সুরমার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছি। এছাড়া জকিগঞ্জে অমলসীদে ১১১ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারে শ্যাওলা ৪২ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার থেকে বুধবার সিলেটে সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। উজানের ঢল ও সিলেটে স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারণেও পানি বাড়ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বুধবার পর্যন্ত সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত জেলার ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াইলাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সিলেটে বন্যার শুরু থেকেই সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরন অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, নগদ এক কোটি ৯২ লাখ টাকা ও ২০ হাজার ২১৮ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার দিনভর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় ত্রাণ বিতরন করেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান। এ সময় তিনি জানান, সিলেটে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। এখন সেটি সমন্বয় করে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে করে সবার হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে, নতুন করে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় সিলেট নগরীর উপশহর, ঘাষিটুলা, বেতেরবাজার, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়সহ কয়েকটি এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। উপশহরের বাসিন্দা শফিক আহমদ জানান, গত ১৬ জুন এক রাতেই তলিয়ে যায় উপশহর। ফলে বৃষ্টি হলে উপশহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে উপশহরের রাস্তাঘাটে পানি এসেছে।
তালতলার ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ পর পানি নেমেছিল। এখন আবার একটু একটু করে বাড়ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজন শঙ্কায় পড়েছেন। সিলেটে সবচেয়ে বড় পশুর হাট কাজিরবাজারেও নতুন করে পানি ঢুকেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট-বিয়ানীবাজার, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখনো হাঁটু পানি। নদীর পানি না কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এখনো অন্তত ৩০টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
সারাবাংলা/পিটিএম