স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ: আসামি বিজিবি সদস্যকে অব্যাহতির আদেশ স্থগিত
২৯ জুন ২০২২ ২০:৫৮
ঢাকা: নীলফামারীর নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ থেকে এক বিজিবি সদস্যকে অব্যাহতি দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ওই বিজিবি সদস্যকে চার সপ্তাহের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমপর্ণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৯ জুন) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে নবম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীর (১৪) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বদরুন নাহার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ওই স্কুলছাত্রীর আইনজীবী বদরুন নাহার বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর দেওয়া আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ওই আসামিকে চার সপ্তাহের মধ্যে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ আত্মসমপর্ণ করতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী আরও বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু পুলিশ বলছে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপর পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আদালত আসামিকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আজ (বুধবার) বিষয়টি আদালতে তুলে ধরলে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি তাকে আত্মসমপর্ণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী আরও বলেন, ওই স্কুলছাত্রীর বাবা একজন দরিদ্র ভ্যানচালক। তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করার সামর্থ্য না থাকায় হাইকোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস তাকে আইনি সহায়তা দিয়েছে।
এর আগে, গত ১৭ মে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক রায় দেন।
রায়ে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশ্লষণ করে এবং ভিডিও ফুটেজের তথ্য যাচাই করে ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ডাক্তারি পরীক্ষায় রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায় না। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক তদন্তে মামলার কোনো সত্যতা না পেয়ে সঠিকভাবে এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ অবস্থায় বাদীর (ওই কিশোরীর মা) নারাজি আবেদন নামঞ্জুর এবং আসামিকে (বিজিবি সদস্য) মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
গত ১৫ জুন ওই স্কুলছাত্রী হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে ধর্ষণের বিচার দাবি করলে আদালত লিগ্যাল এইডকে আইনি সহায়তা প্রদান করতে বলেন। এরপর গত ২৬ জুন বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য আবেদন করা হয়। আজ (বুধবার) শুনানি শেষে আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ স্থগিত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসামিকে জামিনের শর্তে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমপর্ণ করতে বলা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বিকেলে সৈয়দপুর শহরের সাজেদা ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া বোনের নবজাতককে দেখানোর কথা বলে বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান তার প্রতিবেশী বাড়ির স্কুলছাত্রীকে তার বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরীর বড় বোন তাদের মাকে জানায়, আক্তারুজ্জামানের বোন তাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানিয়েছেন যে তার ছোট মেয়ে আজ ফিরবে না। পরদিন সকাল ৮টায় আক্তারুজ্জামানের বোন ভুক্তভোগী কিশোরীর জন্য জামা নিতে তাদের বাড়িতে আসেন। মাংসের ঝোল লাগায় আগের দিন পড়ে থাকা জামা ধুয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আক্তারুজ্জামানের বোন কিশোরীর ঘর থেকে তার আরেকটি জামা নিয়ে যান। এরপর রাত ৯টার দিকে আক্তারুজ্জামান মোটরসাইকেলে করে ভুক্তভোগী কিশোরীকে তার বাড়িতে রেখে যান।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর মেয়ে ভুলভাল বকতে থাকায় পরদিন ১১ নভেম্বর স্থানীয় হুজুরের কাছে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। এতেও মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় ১২ নভেম্বর সকালে নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। ওই দিনই মেয়েকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নীলফামারীর ওই হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয় কিশোরীকে। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের ছাড়পত্রে ‘যৌন নিপীড়নের শিকার’ বলে উল্লেখ করা হয়। পরে এ ঘটনায় কিশোরীর মা একই বছরের ২১ নভেম্বর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা দায়ের করেন।
এরপর তদন্তের পর পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১৭ মে আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। পরে ওই স্কুলছাত্রী বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আসে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর