পাচারের টাকা ফেরত আনা বহাল রেখে অর্থবিল পাস
২৯ জুন ২০২২ ২১:৫৫
ঢাকা: বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখে জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২২ পাস করা হয়েছে। এই বিলে তেমন কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। বিলে যে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে সেগুলো মূলত ভাষাগত পরিবর্তন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এ বিল কণ্ঠভোটে পাস করা হয়। এ সময় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলীয় এমপিরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। অর্থবিল-২০২২ জনমত যাচাইয়ের জন্য যেসব প্রস্তাব আসে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়।
এর আগে, বুধবার (২৯ জুন) বাজেট অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে তিনি বাজেটের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থনীতিকে সচল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, রফতানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন বাড়ানো, পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনেতিক পুনরুদ্ধার ও ঘোষিত প্রণোদনাকে এবারের বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে মোট ২৩টি বাজেট দিয়েছে। আর এবারের বাজেটটি চলতি মেয়াদের চতুর্থ।
তার আগে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সমাপনী বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বাজেটের ওপর তেমন কোনো আলোচনা না করলেও পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান। একইসঙ্গে, তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৯ জুন বাজেট উপস্থাপনের দিন সংসদে থাকতে পারেননি বলে স্পিকারকে জানান।
বৃহস্পতিবার বাজেট পাস
আগামীকাল ৩০ জুন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন। সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস করা হবে। এর আগে গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে পরিচালন বা আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বরাবরের মতো প্রধান আয়ের খাত হিসেবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে (অনুদানসহ) পাওয়া যাবে এক লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ ৪০ হাজার এক কোটি ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা।
জিডিপির আকার
আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
অর্থবিল পাসের জন্য ভোটে দেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বেশিরভাগ সংসদ সদস্য এতে সমর্থন জানিয়ে কণ্ঠভোটের পক্ষে রায় দেন। যার মাধ্যমে পাস হয় অর্থবিল-২০২২ এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম