Sunday 06 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট পাস আজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুন ২০২২ ১০:১২

ঢাকা: ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও নাম মাত্র ট্যাক্স দিয়ে বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখেই পাস হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেল তিনটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য বাজেট অধিবেশনে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হবে। আগামীকাল (১ জুলাই) থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন।’

এদিকে গতকাল বুধবার (২৯ জুন) বড় কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২২ পাস করা হয়েছে। এই বিলে তেমন কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। যদিও বাজেট বিলে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হলেও সেগুলো মূলত ভাষাগত পরিবর্তন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে অর্থবিল কণ্ঠভোটে পাস করা হয়। এ সময় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলীয় এমপিরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। অর্থবিল-২০২২ জনমত যাচাইয়ের জন্য যেসব প্রস্তাব আসে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

গতকাল বুধবার বাজেট অধিবেশনে অর্থবিল পাসের আগে সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে তিনি বাজেটের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থনীতিকে সচল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, রফতানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন বাড়ানো, পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনেতিক পুনরুদ্ধার ও ঘোষিত প্রণোদনাকে এবারের বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে মোট ২৩টি বাজেট দিয়েছে। আর এবারের বাজেটটি চলতি মেয়াদের চতুর্থ।

জানা গেছে, গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে পরিচালন বা আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।

বাজেটের আয়-ব্যয়: ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বাজেটে মোট জিডিপি‘র (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। এতে বাজেটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ।

বাজেটের আয় যেভাবে আসবে: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আদায় করা হবে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আদায় করা হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়াও আগামী বাজেটে কর ব্যতীত প্রাপ্তি থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে তিন লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও আগামী অর্থবছরে বাজেটে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ থাকছে।

বাজেটে যেভাবে ঘাটতি পূরণ করা হবে: আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মোট বাজেটের ৩৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। এই বিশাল ঘাটতি বাজেট পূরণের সরকার অভ্যন্তরীণ ঋৎস ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। বিদেশ থেকে ঋণ নিচ্ছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংক বর্হিতভূত খাত থেকে ঋণ নিবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা অনান্য খাত থেকে নেওয়া হবে।

ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৬৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি): আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি’র আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৯ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

বাজেটে জিডিপি আকার ও মূল্যস্ফীতি: আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপি’র আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকেআগামী অর্থছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/এনএস

০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর