সময়-ভোগান্তি কমাবে বিমানবন্দরে ই-গেট, যাত্রীদের অনীহা ‘অমূলক’
৩০ জুন ২০২২ ১৯:৪১
ঢাকা: সময় সাশ্রয় ও ভোগান্তি কমাতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্ট ও বিমানবন্দরে ই-গেট ব্যবহার করা হচ্ছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এখন বিমানবন্দরগুলোতে ই-গেট বসানো হয়েছে, যা যাত্রীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে করেছে দ্রুততর, কমিয়েছে ভোগান্তি। তবে ই-গেট ব্যবহারে অনেকের মধ্যেই অনীহা দেখা যায় বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এই অনীহা থাকতে পারে অনেকের মধ্যেই। তবে এই অনীহা অমূলক। সময় বাঁচাতে ও ভোগান্তি কমাতে ই-গেট ব্যবহারের তাগিদ তারা দিচ্ছেন যাত্রীদের।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিদেশ থেকে যেসসব যাত্রী এসেছেন, তারা ইমিগ্রেশনের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ইমিগ্রেশনের অনেকগুলো বুথ থাকার পরও লাইন কমতে সময় লাগছে। অথচ পাশেই রয়েছে ই-গেট। সেই ই-গেট ব্যবহার করে সহজেই পার হওয়া যাচ্ছে। তারপরও বেশিরভাগ যাত্রীই সাধারণ ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বলছেন, সরাসরি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই বিমানবন্দরে প্রবেশ করেই ইমিগ্রেশন ডেস্কে চলে যান তারা। একটি গেট, সেখানে দু’টো দরজা— সবকিছু মিলিয়ে একটু হিজিবিজি পরিবেশ। সে তুলনায় ই-গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ। আগের পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশনে যেখানে ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়, ই-গেট ব্যবহার করলে সেই সময় নেমে আসে মাত্র আধা মিনিটের মধ্যেই।
ইমিগ্রেশনে নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, যারা ব্যবহার জানেন তারা নিজেই ই-গেট ব্যবহার করছেন। আর যারা করতে চান না, তাদের জোর করে ই-গেট ব্যবহারে বাধ্য করা হয় না। তবে সবাইকে ই-গেট ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়। তারপরও অনেকেই ই-গেট নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। কেউ কেউ অনভ্যস্ততার কারণে ই-গেট ব্যবহার করছেন না। এখানে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও ই-পাসপোর্টের পক্ষ থেকে দক্ষ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক রয়েছেন সহযোগিতা করার জন্য। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং ই-গেট ইমিগ্রেশনের সংখ্যা বাড়বে।
কানাডা থেকে এসেছেন মাইনুল ইসলাম। তিনি ই-গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন করেন। জানতে চাইলে সারাবাংলাকে বলেন, কানাডায় এই ই-গেট ব্যবহার করেই এসেছি। এখানেও ই-গেট ব্যবহার করতে পেরে ভালো লাগছে। কারণ পাশেই দেখুন কত বড় লম্বা লাইন। অথচ ওনারা সহজেই এই ই-গেট ব্যবহার করতে পারেন। ধীরে ধীরে ই-গেটের ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
তানজিলা আক্তার শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া। তিনি ই-গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন বক্সে গেছেন। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমি প্রথমবার বিমানবন্দর দিয়ে যাচ্ছি। আর প্রথমবারই ই-গেট ব্যবহার করলাম। অনেক সহজ। গণমাধ্যমে জানতে পারি, ইমিগ্রেশনে নাকি অনেক ভোগান্তি হয়। কিন্তু ই-গেট ব্যবহার করায় দেখলাম কোনো ভোগান্তি নেই।
আরিফুল ইসলাম প্রথমবার ফ্লাই করে শ্রমিক ভিসায় দুবাই যেতে ইমিগ্রেশনে এসেছেন। ই-গেট ব্যবহার করতে পারছিলেন না তিনি। ই-পাসপোর্টের কর্মকর্তারা দেখিয়ে দিলে তিনি সহজেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। আরিফুল বলেন, অনেক সহজ একটি ব্যাপার। সবারই ই-গেট ব্যবহার করা উচিত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৪টি ই-গেটের কার্যক্রম সেবা পরিদর্শনে যান পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সঙ্গে ছিলেন পুলিশের এসবি শাখা ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তারা। তারা জানান, গত ৭ জুন বিমানবন্দরে ই-গেট উদ্বোধন করা হয়। ওই দিন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৭৬ জন যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দেশের বাইরে গিয়েছেন। একই সময়ে ২ হাজার ১০৮ জন যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করে দেশে ফিরেছেন।
পরিদর্শন শেষে ই-পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহিরাগমন যাত্রীদের এক্সিট ও এনট্রান্সের জন্য ১২টি করে মোট ২৪টি ই-গেট বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ছয়টি করে ১২টি, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ছয়টি করে ১২টি, বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি করে দুইটি এবং বাংলাবান্ধা বন্দরে একটি করে দুইটি ই-গেট বসানো হয়েছে। ই-গেট ব্যবহার করে একজন যাত্রী সহজেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। এতে ই-গেট পার হতে মাত্র ১৮ সেকেন্ড এবং ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ এক মিনিট সময় লাগে। কিন্তু এটি ই-গেট ছাড়া করলে অনেক বেশি সময় লাগছে। ই-গেট ব্যবহারে সবার জন্যই সুবিধা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সিভিল অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকেও ই-গেট ব্যবহারে যাত্রীদের বিশেষ সহযোগিতা করা হচ্ছে। কোনো যাত্রী ই-গেট ব্যবহারে সহযোগিতা চেয়ে থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা ই-গেট ব্যবহারে সব পাসপোর্টধারী বহিরাগমন যাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করছি।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন বিভাগের পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, ই-গেট ব্যবহারে ইমিগ্রেশনের সময় আগের চেয়ে সময় কমে এসেছে। যাত্রীদের অপেক্ষার যে ভোগান্তি ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। এখন আর কাউকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। আশা করছি আরও বছরখানেক লাগবে পুরোপুরি এর সুফল পেতে। মানুষজন অভ্যস্ত হলেই ই-গেট ব্যবহার বাড়বে।
এক প্রশ্নের জবাবে এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ই-গেট ব্যবহার করে যেন কেউ মানবপাচার করতে না পারে সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ সজাগ রয়েছে।
এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ই-পাসপোর্টের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো.খালিদ সায়ফুল্লাহ, উপ-প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ও পাসপোর্ট অধিদফতরের উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর