Monday 30 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রামীণ টেলিকমের অর্থের বিনিময়ে শ্রমিক নেতা ও আইনজীবীর আপস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ জুলাই ২০২২ ০৮:২২

ঢাকা: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের দায়ের করা মামলার আইনজীবী ও অন্যান্যদের ২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) হাইকোর্টে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা কী পরিমাণ বকেয়া টাকা পেয়েছেন এ সংক্রান্ত তথ্য দাখিলের নির্দেশ দেন। এ সময় আদালত শুনানিতে বলেন, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুনানিতে বিচারক বলেন, মামলাটি সমঝোতা হয়েছিল কিন্তু এ মামলায় ২৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন হয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ মামলার আইনজীবী এবং গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের একাউন্টে এ টাকার লেনদেন হয়েছে।

এক পর্যায়ে আদালত ড. মুহম্মদ ইউনূসের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কত টাকা ফি নিয়েছেন?’ তখন আইনজীবী বলেন, ‘আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি।’ আদালত বলেন, ‘আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন। কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন?’ এরপর শ্রমিকেরা কে কত টাকা পেয়েছেন, তার তালিকা দাখিলের জন্য আগামী ২ আগস্ট দিন নির্ধারণ করে দেন আদালত।

শ্রমিক ও কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী এসময় আদালতকে জানান, এ পর্যন্ত ১৭৬ জন শ্রমিকের মধ্যে ১৬৮ জন শ্রমিককে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ৩৮০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি আট শ্রমিকের মধ্যে চার জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর চার জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি।

আপসের জন্য অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য
এদিকে, গ্রামীণ টেলিকম ও শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে সমঝোতা প্রক্রিয়া ও অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া লভ্যাংশ প্রদান এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গত ২৭ এপ্রিল উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক লি: এর রাজধানী গুলশান ব্রাঞ্চে একটি একাউন্ট খুলে। ওই একাউন্টে গ্রামীণ টেলিকমের অন্য একটি একাউন্ট থেকে ৪৩৮ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা জমা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক-কর্মচারীরাও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১১০টি মামলা প্রত্যাহার করে নেন।

বিজ্ঞাপন

চুক্তি অনুযায়ী ওই একাউন্টের সম্পূর্ণ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের পাওয়ার কথা থাকলেও একাউন্টটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৭ মে একটি চেকের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা এবং ২৫ মে আরও দুটি চেকের মাধ্যমে ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা অর্থাৎ মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকম এমপ্লয়ী ইউনিয়ন নামের ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি একাউন্টে জমা করা হয়। ওই একাউন্টের সিগনেটরি হিসেবে রয়েছেন গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান।

ডাচ বাংলা ব্যাংকের গ্রামীণ টেলিকম এমপ্লয়ী নামের ওই একাউন্টটি থেকে গত ১৯, ২৬, ২৯ মে এবং ২ জুন পৃথক ১৩টি চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ২৫ কোটি টাকা দশটি একাউন্টে প্রদান করা হয়। এসব একাউন্টে স্থানান্তরকৃত টাকার মধ্যে মো. ইউসুফ আলী এককভাবে পেয়েছেন ৯ কোটি টাকা। ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান চৌধুরী যৌথভাবে পেয়ছেন ৬ কোটি টাকা। ওই দুই ব্যক্তির আইনি প্রতিষ্ঠান এটর্নিস পেয়েছে এক কোটি টাকা। গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও ইউনিয়নের অপর নেতা মো. মাইনুল ইসলাম প্রত্যেকে পেয়েছেন ৩ কোটি টাকা করে।

এছাড়াও লোকমান ও কামরুল নামক আরও দুই ব্যক্তি যথাক্রমে ৪০ লাখ ও১০ লাখ করে পাঁচটি চেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। উল্লেখ্য, মো. ইউসুফ আলী এবং জাফরুল হাসান চৌধুরী উভয়েই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।

এর আগে, গত ২৩ মে ১১০টি মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করে গ্রামীণ টেলিকম। তারও আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর