হলি আর্টিজান হামলার ৬ বছর, ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষা
১ জুলাই ২০২২ ১০:৫১
ঢাকা: ২০১৬ সালের ১ জুলাই স্মরণকালের ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। অভিজাত গুলশান এলাকায় হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ সেই জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। রাতভর জিম্মি করে রাখা হয় বেকারির স্টাফ ও সেখানে যাওয়া বেশ কয়েকজন অতিথিকে। শেষ পর্যন্ত সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ইউনিটের নেতৃত্বে অপারেশন ‘সার্চ লাইটের’ মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে সেই কালরাতের। নিহত হয় হামলাকারী ৫ জঙ্গি।
সেই হলি আর্টিজান হামলার ছয় বছর পূর্ণ হলো আজ। আলোচিত এই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। হামলার সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই মামলার রায় ঘোষণা হয় বিচারিক আদালতে। এরপর আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও মামলাটি এখনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল হাইকোর্টের শুনানির অপেক্ষায় ঝুলে আছে।
হলি আর্টজান মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য এরই মধ্যে পেপারবুক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও শুনানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ মোটামুটি শেষ। ইদুল আজহাসহ অন্যান্য উপলক্ষ মিলিয়ে ৩ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এরপর আদালত খুললেই রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির ডেথ রেফারেন্সের শুনানির উদ্যোগ নিতে আবেদন জানাবে।
হলি আর্টিজান হামলার তিন দিন পর ২০১৬ সালের ৪ জুলাই নিহত ৫ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বিচারিক আদালত ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট পলাতক আসামি মো. শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদের সম্পত্তি ক্রোক ও তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন। ওই বছরেরই ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এক বছর ধরে মামলার বিচারকাজ পরিচালনার পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়।
এই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেন আদালত।
নিয়ম অনুযায়ী, বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য মামলার নথিপত্র বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা খালাস চেয়ে আপিল করেছিলেন। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি সেই আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে জেল আপিল শুনানিও এখনো অপেক্ষমাণ।
হলি আর্টিজান বেকারির সেই জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতের এক জন ও দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন। অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে রুদ্ধশ্বাস সে পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটলে সেখান থেকে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার হয়। সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
একই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেডের আঘাতে রেস্টুরেন্টের বাইরে নিহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।
সারাবাংলা/টিআর
জঙ্গি হামলা জেল আপিল শুনানি ডেথ রেফারেন্স শুনানি মামলার পেপারবুক হলি আর্টিজান হামলা হলি আর্টিজান হামলার ৬ বছর