Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশের ‘অন্বেষণে’ ঢাবি উপাচার্য

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১ জুলাই ২০২২ ১৪:৪৫

১০১ পেরিয়ে ১০২তম বর্ষে পদার্পণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সংযোগ জড়িয়ে রয়েছে আষ্টেপৃষ্টে। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) বলা হয়ে থাকে নেতৃত্ব তৈরির আঁতুড়ঘর। ডাকসু নির্বাচনে জয় নিয়ে বহু নেতাই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে দেশের রাজনীতি যখন সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় প্রত্যাবর্তন করল, ঠিক ওই সময়ই বন্ধ হয়ে যায় সেই ডাকসুর পথচলা। প্রায় তিন দশক পর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের হাত ধরে ২০১৯ সালে নির্বাচনের মুখ দেখে ডাকসু।

তিন দশকের অচলায়তন ভাঙলেও ফের স্থবিরতা বিরাজ করছে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির ‘অজুহাতে’ ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। তবে ২০২২ সালে এসেও সেই নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এই সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনসহ এ ধরনের বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গটি বরাবরই এড়িয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি কেবল প্রশাসনের হাতে নেই। এছাড়া নির্বাচন আয়োজনে ‘সুন্দর ও অনূকূল’ পরিবেশের খোঁজে আছেন বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে ঢাবি’র ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিন দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই গুরুত্ব অনুধাবন করেই আমরা সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’

এর আগে, প্রায় তিন দশক পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ আলোর মুখ দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোট ২৫শটি পদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) ও সমাজসেবা সম্পাদক— এই দুই পদ ছাড়া বাকি ২৩টিতেই জয় পান ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরা। বাকি দু’টি পদে জয় পান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে গড়ে ওঠা সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দু’জন।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৬-এর (গ) ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত পদাধিকাররা ৩৬৫ দিন, অর্থাৎ এক বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। নির্বাচিত ২৫ জন প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকসুর দায়িত্ব নেন ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২২ মার্চ শেষ হয় ওই কমিটির এক বছরের মেয়াদ। তবে নতুন নির্বাচন মাঠে না গড়ানোতে গঠনতন্ত্রের ৬-এর (গ) ধারায় অনুযায়ী অনুযায়ী ৯০ দিন সময় বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৩ জুন ওই ৯০ দিনও অতিক্রান্ত হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেঙে যায় ডাকসুর সর্বশেষ কমিটি।

ডাকসুর পরের নির্বাচন কবে— সেই থেকে এই প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উত্থাপন করা হয়েছে।  সবশেষ বার্ষিক সিনেট অধিবেশনেও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। সময়ে সময়ে এ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলেও প্রত্যেকবারই ‘অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষা’র কথা জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান দাবি করেন— ডাকসু নির্বাচন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে নেই। প্রয়োজন আছে ‘মাল্টিসেক্টরাল ইন্টারভেনশন’-এর।

তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ মাল্টিসেক্টরাল। এখানে প্রয়োজন হয় মাল্টিসেক্টরাল ইন্টারভেনশনের। কেবল প্রশাসন সিদ্ধান্তে নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েই নির্বাচন আয়োজন করা যাবে— বিষয়টি এমন নয়। এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। জাতীয় অনেক কিছু এর সঙ্গে যুক্ত। সেক্ষেত্রে চমৎকার একটি অনুকূল পরিবেশ খুব প্রয়োজন। অনেকসময় অনুকূল পরিবেশ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।’

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশের খোঁজে আছেন জানিয়ে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল থাকে, যারা ভালো বিষয়কে নষ্ট করে এবং এটাকে আবর্তন করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বড় আকারের পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা করে। সে বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে একটি সুন্দর-অনুকূল পরিবেশ অন্বেষণে আছি।’

এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনেও উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। ওই সময় তিনি নির্বাচন আয়োজনে দু’টি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেছিলেন— ‘জাতীয়ভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সংস্কৃতির শক্তিশালী হলে এবং পাশাপাশি সব মহলের সহযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

ওই ঘটনার প্রায় সাত মাস পরও একই সুর ঢাবি উপাচার্যের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সংস্কৃতি থাকতে হবে। এছাড়া প্রযুক্তির যে অপব্যবহার, তা রোধ করতে হবে। এই বিষয়টি অনেক ক্ষতিকর। এগুলো বড় দুর্ঘটনার জন্ম দেয়।’

এদিকে ডাকসুর সবশেষ নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলছেন, একবার নির্বাচন হওয়ার পর একই প্রশাসন পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করছে না— বিষয়টি তাকে বিস্মিত করছে।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বিস্মিত। বর্তমান প্রশাসনের অধীনেই সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল। সেটি অনেকটাই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এরপর ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু একই প্রশাসন কেন নির্বাচন আয়োজন করতে আগ্রহী হচ্ছে না— বিষয়টি আমাকে অবাক করে।’

বাচ্চা না কাঁদলে অনেক সময় মা-ও দুধ দেয় না— প্রবাদটি উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদেরও কিছু দায়দায়িত্ব আছে। তাদেরও এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে। তা না হলে হবে না। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে যে অস্ত্র উঁচিয়ে সন্ত্রাসের চিত্র দেখা গেছে, ডাকসু থাকলে এমন চিত্র হয়তো দেখতে হতো না।’

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

ডাকসু ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ঢা‌বি ঢাবি উপাচার্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর