Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জমজমাট আটঘর-কুড়িয়ানা’র ডিঙি নৌকার হাট

জি এম শান্ত, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ জুলাই ২০২২ ০৯:০৭

বরিশাল: প্রতিবছর বর্ষা এলেই দক্ষিণাঞ্চলে কদর বেড়ে যায় নৌকার। মানুষ চলাচল ও পণ্য পরিবহনের জন্য নির্ভরযোগ্য বাহন হিসেবে খুঁজে নেয় নৌকা। শুধু যাতায়াত আর পণ্য পরিবহন নয়, দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের মৎস্য শিকার ও কাঁচা সবজি, পেয়ারা ও আমড়া বিক্রির জন্য নিকটবর্তী হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রধান বাহন এই নৌকা।

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার পূর্বদিকে আটঘর-কুড়িয়ানা বাজার। বছরের জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের নৌকার সবচেয়ে বড় হাট বসে এখানে।

বিজ্ঞাপন

১০০ বছরের পুরোনো এ হাটকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবে মনে করা হয়। বর্ষা মৌসুম এলেই সন্ধ্যা নদীর শাখা আটঘর-কুড়িয়ানা খালপাড়ে নৌকার হাট জমজমাট হয়ে ওঠে। হাট বসে সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবার।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল অবধি খালের পাড়ে ও সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট ডিঙি নৌকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কৃষক, জেলে, গৃহস্থ ছাড়াও বরিশালের বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর, ঝালকাঠি, রাজাপুর, পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর থেকে মানুষ হাটে আসেন নৌকা কিনতে। তারা ঘুরে ঘুরে দরদাম করে পছন্দের নৌকা কিনে চালিয়ে বাড়ি ফেরেন। কেউ কেউ দু-তিনটি নৌকা কিনে তা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে তুলে নিয়ে যান।

এখানে নতুন নৌকার সঙ্গে বৈঠা দেওয়া হয় না, কিনতে হয় আলাদা। সেটি পাওয়া যায় আটঘর নৌকার হাটের পাশেই। হাটে ২ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায় মিলবে কাঠের তৈরি ডিঙি নৌকা। বৈঠার দাম আকারভেদে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অন্য বছরের মতো এবারও নৌকা বিক্রির ধুম পড়েছে। নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের গ্রামডুবি, কাটাখালী, একতা ও চামী গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত। তারা রেডিমেড নৌকা বানিয়ে রাখেন আবার কেউ অর্ডার দিলেও চাহিদা অনুযায়ী নৌকা তৈরি করে দেন।

বিজ্ঞাপন

একসময় সুন্দরী কাঠ সহজলভ্য ছিল। তখন সুন্দরী কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি হতো। এখন সুন্দরী কাঠ পাওয়া যায় না তেমন। তাই কড়ই, আম, রেইনট্রি ও মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকা।

নৌকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছ ধরা আর বর্ষা মৌসুমে ব্যক্তিগত যাতায়াত ও পশু-পাখির খাদ্য সংগ্রহের জন্য নৌকা কেনেন বেশিরভাগ মানুষ।

কারিগর শংকর মিস্ত্রি বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে নৌকা বানানোর কাজ করছি। আমার কাছে সাড়ে ২ হাজার থেকে শুরু করে ৯ হাজার টাকার নৌকা রয়েছে। দুই হাজার টাকার নৌকা আম কাঠ দিয়ে তৈরি। সেগুলো সাধারণত ১০ হাত হয়। আর ১২-১৩ হাত লম্বা নৌকা সাত থেকে নয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কি কাঠ দিয়ে নৌকা বানানো হচ্ছে তার ওপর দাম নির্ভর করে।’

নেছারাবাদ উপজেলার মাহমুদকাঠি গ্রামের আব্দুল হক পেশায় নৌকা ব্যবসায়ী। তিনি জানান, তার বাপ-দাদা এই হাটে নৌকা কেনাবেচা করতেন। পেয়ারার মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকার হাটে কেনাবেচা এখন বেশ জমজমাট।

রুস্তুম আলী নামে অপর এক নৌকা ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেচাকেনা ভালো হলে প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৩০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকাপ্রতি লাভ হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কখনও কখনও লোকসান গুণতে হয়।’

হাটে নৌকা কিনতে আসা ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের লালমোহন গ্রামের জাবেদ আলি জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তিনি আটঘর হাটে নৌকা কিনতে আসেন। ডিঙি নৌকা ১-২ বছর পর নষ্ট হয়ে যায়। পেয়ারা, কৃষিকাজ ও মাছ ধরার জন্য নৌকা কেনেন তিনি।

সারাবাংলা/এমও

আটঘর-কুড়িয়ানা ডিঙি নৌকার হাট বরিশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর