অনুমতি পাচ্ছে ৯৫ প্রতিষ্ঠান, আসছে ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল
১ জুলাই ২০২২ ২২:৪২
ঢাকা: বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৯৫ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে চাল আমদানির অনুমতি। এর ফলে ১১ আগস্টের মধ্যে দেশের বাজারে ঢুকবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল। প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আমদানির অনুমতি নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
শর্ত হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে— বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এলসি খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।
আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশের বাজারে আনতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককেও জানাতে হবে।
চাল আমদানির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামে পুনরায় প্যাকেটজাত করতে পারবে না। চাল বিক্রি করতে হবে প্লাস্টিক বস্তায়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে দেওয়া চিঠিতে চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে— আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য (বিল অব এন্ট্রিসহ) খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাতকরণ করতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানাতে হবে।
শর্তে আরও বলা হয়— বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু/জারি করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নামে ফের প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা বস্তায় চাল বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া প্লাস্টিকের বস্তায় আমদানি করা চাল বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে।
চালের মৌসুম চলার পরও দেশের বাজারে চালের দাম বেড়ে চলেছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে— চাল সরবরাহ ও মজুদের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই।
এবার ভরা মৌসুমেও কমেনি চালের দাম। প্রায় এক মাস ধরে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চালের বাজারে দফায় দফায় অভিযান চালালেও দাম কমেনি, বরং বেড়েছে।
চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৩০ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ অবৈধভাবে চাল মজুত করলে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
দেশে সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। ফলে প্রতি বছর এই মৌসুমে চালের দাম কিছুটা কম থাকে। কিন্তু এবার বন্যায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে দাম। গত এক-দেড় মাসে প্রতি কেজিতে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
২৩ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল আমদানিতে শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ ভাগ নির্ধারণ করেছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) ঢাকার বাজারে সরু চাল বিক্রি হয়েছে (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) ৬৪ থেকে ৮০ টাকায়। গত সপ্তাহেও দাম ছিল ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা। মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) দামও বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরু চালের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৯ শতাংশ।
চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দাম বাড়ায় বছরের বাকি সময়ের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। তার ওপর দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, উত্তরে কুড়িগ্রাম অঞ্চলেও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। এতে আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে শুল্ক। তবে নিয়ন্ত্রণমূক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, অ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি বহাল আছে। এতদিন এই শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর বাইরে অগ্রিম আয়কর, এটিভি মিলিয়ে শুল্ক দিতে হবে ২৫ শতাংশ।
এতদিন আমদানি শুল্কের সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে শুল্ক ছিল ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য আনতে সরকারকে দিতে হতো ৬২ টাকা। এখন কম দিতে হবে ৩৭ টাকা।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কহার কমানোর এই আদেশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
সারাবাংলা/একে