‘আগে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার, তারপর ভারতের দিকে নজর’
২ জুলাই ২০২২ ১৮:৩৯
ঢাকা: ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের কঠোর অবস্থান জানান দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, আগে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে তারপর ভারতের স্বার্থের দিকে আমরা নজর দেব।
শনিবার (২ জুলাই) বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ ও দ্রব্যমূল্য কমানের দাবিতে এবং পাঠ্যপুস্তক থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাতিলের প্রতিবাদে এ গণমিছিল আয়োজন করা হয়।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখতে হবে- এটাই বাস্তবতা। সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা- এটাই দেশের ভদ্রতা। কিন্তু সম্পর্ক রাখতে গিয়ে আমাকে জবাই হতে হবে, এটা সঠিক নয়। এটা মূলত অতি উৎসাহী, অযৌক্তিক এবং সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী সিদ্ধান্ত। আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারত। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থ আগে উদ্ধার হবে, তার পর ভারতের স্বার্থে আমরা নজর রাখব।’
তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অভিন্ন নদীর ওপর বাঁধ তৈরি করে বাংলাদেশকে পানিবঞ্চিত করছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-রুট ছিল। সেই রুট বন্ধ হয়ে গেছে ফারাক্কা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের কারণে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-রুট এখন চার হাজার কিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে।’
‘বাংলাদেশে সঙ্গে ভারতে ৫৪টা নদীর সরাসরি সম্পৃক্ততা। যখন আমাদের পানি প্রয়োজন, তখন তারা পানি আটকে দেয়। আর যখন পানি প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারে। পানির নিচে মা-বোন-ভাই ও বাচ্চাদের লাশ ভাসতে দেখে আমাদের কলিজায় আর সহ্য হয় না’- বলেন সৈয়দ মুহম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘ভারতপ্রীতি দেখাতে গিয়ে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলবেন না, এটা বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ করছি, আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। এই ধরনের আচরন আমরা কখনো সহ্য করতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি অনেক উন্নয়নের জোয়ার দেখিয়েছেন। কিন্তু মানুষের অন্তরের মধ্যে স্থান গড়তে পারেন নাই। উৎসব, বিভিন্ন ড্যান্স-নাচ বেহায়াপনার মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উৎসবে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু সিলেটের বন্যাদুর্গতদের জন্য আপনি মাত্র ত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এটা আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যশা করতে পারে? কখনই পারে।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা চাই আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। নইলে পরামর্শের ভিত্তি কঠোর আন্দোলনে যেতে আমরা বাধ্য হব।’
গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, সৈয়দ মুহম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ফজলে বারী মাসুদ, মো. ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আতাউর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন, শ্রমিক নেতা আব্দুর রহমান, যুব আন্দোলনে সেক্রেটারি আতিকুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে সৈয়দ মুহম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর ঘুরে ফের বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ইসলামী আন্দোলনের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন।
মিছিল ঘিরে সম্ভব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সড়কের মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। মিছিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ইসলামী আন্দোলন, যুবআন্দোলন, ছাত্রআন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম