‘জাপার অবস্থা এলোমেলো’
২ জুলাই ২০২২ ২১:১৮
ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ যেভাবে পার্টিকে উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন; এখন তা নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) এখন অনেকটাই এলোমেলো অবস্থা।
তিনি বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাপাকে যে শক্তিশালী অবস্থায় রেখে গিয়েছেন সে অবস্থায় দলটি নেই। এক কথায় আগের অবস্থায় নেই জাপা। তাই যাদের অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, সবাইকে নিয়েই পার্টি শক্তিশালী করতে হবে।
রওশন এরশাদ বলেন, কে কী করল বা কে কী বললো সেদিকে না তাকিয়ে, পার্টির নেতাকর্মীদের যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ এলাকায় দল শক্তিশালী করুন। দেখবেন আপনাকে পায়ে ঠেলে দেওয়ার শক্তি কেউ পাবে না।
শনিবার (২ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে জাপা আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ পার্টির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানালেও তারা কেউ আসেননি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের কে কী করছেন থাইল্যান্ডে হাসপাতালের বেডে শুয়ে সব খবর নিয়েছি, কিন্তু আমার খবর কেউ নেয়নি। অথচ যাদেরকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ-মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
বেগম এরশাদ বলেন, জাপাকে শক্তিশালী করতে হলে বড়-ছোট নতুন-পুরাতন সবাইকে লাগবে। দলের বাইরে যারা আছেন বা চলে গেছেন তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাইকে একত্রিত করা না গেলে পার্টি শক্তিশালী করা যাবে না। আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, অনেক ভালো ভালো নেতাকর্মী দলের বাইরে আছে, তাদেরকে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। আগামী দিনে তরুণরাই তো দলের নেতৃত্ব দেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি আপনাদের মনে অনেক ব্যথা। কিন্তু সব ব্যথা জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পার্টিকে শক্তিশালী করা না গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকা যাবে না।
রওশন এরশাদ বলেন, আমরা কি বিএনপির সমকক্ষ হতে পেরেছি, নিশ্চয় না। বিএনপি আছে, জামায়াত আছে, এটা মনে রাখতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমকক্ষ করতে না পারলে রাজনীতিতে টিকে থাকা যাবে না।
তিনি বলেন, আবারো চেকআপ শেষে দেশে ফিরে পার্টিকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো, যা যা করার দরকার তাই করা হবে। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এত মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা দেখে আমার দু’চোখে বেয়ে জল আসে।
রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদ ওপারে ভাল আছেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহর রসূল আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। সুবাহনাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। সকালে খবর আসে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ নিশ্চয় উনাকে জান্নাতবাসী করবেন। কারণ, তিনি ইসলামের খাদেম। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন, পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেন। মসজিদ-মন্দিরসহ সব উপাসনালয়ের পানি-বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।
তার বক্তব্য শেষে সভায় বক্তারা জাতীয় পার্টিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে অভিযোগ করে জাতীয় পার্টি নেতৃত্ব রওশন এরশাদকে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
এ সময় জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন বলেন, পার্টির কর্মীরা আজ অসহায়, তাদের খোঁজ কেউ নেয় না। আপনাকে দলের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টির লাখো কর্মী আপনার অপেক্ষায় আছে।
প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আপনার নামের পাশে এরশাদ আছে। বাংলার মানুষ আপনাকে নেতৃত্বে দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ সংকটাপন্ন। যে লোক কোনো দিন জেল খাটেনি, রাজপথে ছিল না, তার কাছে জাতীয় পার্টি নিরাপদ নয়।
সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, জাতীয় পার্টিতে শুধুই বিশৃঙ্খলা, দ্বিধাবিভক্তি। কেন্দ্রে শুধু পদ আমদানি হয়। মুরগির মত দলীয় পদ বিক্রি হচ্ছে।
সভায় জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি যখন অসুস্থ তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে, বাধা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ড যান, তারপরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেধে আমোদ ফুর্তি করেছে। কাজী মামুন রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় সাদ এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান করে যাওয়ার দাবি জানান।
জাপার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, আজকে যারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়নি তারা জাতীয় পার্টি করে না। কাউন্সিলে কথা ছিল, দলীয় পতাকা আপনি ব্যবহার করবেন। সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন আপনি। আপনার পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। কোনো কথা রাখা হয়নি।
জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ, প্রেসিডয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, গফফার বিশ্বাস, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু,পার্টির যুগ্ম মহাসচিব রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ এমপি, আইডিয়াল কলেজের সাবেক ভিপি মুস্তাকুর রহমান মোস্তাক, শ্রমিক নেতা শাহ আলম তালুকদার, জাপা নেতা মিজানুর রহমান দুলাল, কাজী আশরাফ সিদ্দিকী, মহিবুল কাদের চৌধুরী পিন্টু, মঞ্জরুল হক সাচ্চা, জহির উদ্দিন জহির, মো. ইদ্রিস আলী, মহিলা নেত্রী হাসনা হেনা, শারমিন পারভীন লিজা, রুনা শেখ ওহাফছা আক্তার প্রমুখ।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম