জুনের শেষ ১০ দিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে
৩ জুলাই ২০২২ ০৯:৪৭
ঢাকা: দেশে বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। মে মাস থেকে জুনের প্রথম ১০ দিন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত সংখ্যা দুই অংকে থাকলেও ১২ জুন থেকে এটি ১০০ ছাড়িয়ে যায়। ২২ জুন থেকে এক হাজারের সংখ্যাও অতিক্রম করে। ২৭ জুন থেকে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় দুই হাজারেরও বেশি। শুধুমাত্র জুন মাসের কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ মাসে প্রথম ২০ দিনের তুলনায় শেষ ১০ দিনে চার দশমিক ৪৯ গুণ বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি চলমান থাকতে পারে জুলাই মাসেও। আর তাই এমন অবস্থায় সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি সবাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুনভাবে কোনো ধরনের ভ্যারিয়েন্ট বা নতুন কোনো ঢেউয়ের কথা আলাদাভাবে চিন্তা না করে শুধুমাত্র যদি স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সতর্ক হওয়া যায়, তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার বিষয়েও আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনা না মানলে বিপদের আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সরকারিভাবে নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেগুলো কার্যকর করার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা না যাওয়ার কারণেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিস্থিতি কী?
দেশে ১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত সময়সীমায় ৪৭ হাজার ৭৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪২৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় সরকারিভাবে। এই ১০ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে কেউ মারা যান নি বলেও জানানো হয়। তবে এরপরে ১১ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ১০ দিন সময়ে ৬৩ হাজার ৬০টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার ২৬৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই ১০ দিনে এক জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান।
তবে ২১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে দেশে বাড়ে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। এই ১০ দিনে দেশে এক লাখ ১৪ হাজার ৬৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই ১০ দিনে ১৬ হাজার ৫৮৫টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই ১০ দিনে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় ১০ জন।
অর্থাৎ জুন মাসে প্রথম ২০ দিনের তুলনায় শেষ ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৪৯ গুণ।
নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ কম
দেশে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও নমুনা পরীক্ষা নিয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দেখা যাচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। জ্বর, সর্দি, কাঁশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে জনসাধারণের মাঝে। অনেক ক্ষেত্রে ঋতু পরিবর্তনের কারণে জ্বর আসছে ভেবেও নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে নকা।
তবে স্বস্তির দিক হচ্ছে, নমুনা পরীক্ষার পরে যাদের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে এখন পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার কম। রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ স্থানের কোভিড-১৯ বিশেষায়িত্ব হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষন করে এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে। জুন মাসে শেষ ১০ দিনে দেশে ১৬ হাজার ৫৮৫টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হলেও সরকারি তথ্যমতে ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র ৫২৫ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আতঙ্ক ও গুরুত্ব দুইটিই কমেছে
দেশে ২০২০ সালের শুরুর দিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে নানারকমের আতঙ্ক কাজ করলেও ধীরে ধীরে সেটি কাটতে থাকে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মানুষের মাঝে ভয় কেটেছে অনেকটাই। তবে বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের গুরুত্বটাও কমেছে বলে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে অনীহা দেখা যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ, কোভিড-১৯ সংক্রমণের ওমিক্রনের নতুন যে উপধরন ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য বিশ্বে পাওয়া যায় নি।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, এ থেকে বাঁচতে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় সংক্রমণ আরও বাড়বে। এরই মধ্যে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারকে মাস্ক পরিধান বাস্তবায়নে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সবাইকে করোনা নিয়ে সচেতন থাকার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও দেন তিনি।
প্রায় একই আহ্বান জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ডা. মোশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেসব পরামর্শ দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্য কমিটির সভাগুলো সশরীর উপস্থিত হয়ে করা সম্ভব না হলে ভার্চ্যুয়ালি করার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুধু নির্দেশনা দিয়ে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা যাবে না। এজন্য সরকারকে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। এজন্য বরাদ্দও রাখতে হবে। শুধু নির্দেশনা দিলেই কাজ হবে না, প্রয়োজনে যাদের মাস্ক কেনার সামর্থ নেই, তাদের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে।
তবে সংক্রমণ শনাক্তকরণের জন্য নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়ানো বলেও মতামত দেন এই দুই বিশেষজ্ঞ।
সারাবাংলা/এসবি/এএম