Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২ কোটির বেশি ফি নেওয়ার কথা ‘পরোক্ষভাবে’ স্বীকার আইনজীবী’র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ জুলাই ২০২২ ১৮:৪১

ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি ফি নেওয়ার কথা ‘পরোক্ষভাবে’ স্বীকার করে নিয়েছেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। তিনি বলেছেন, সমঝোতা করে নয়, মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পরাজিত করে চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের ৪৩৭ কোটি টাকা আদায় করে দিয়েছি। সেখান থেকে ক্লায়েন্টরা আমাকে মোটা অংকের ফি দিয়েছেন। রোববার (৩ জুলাই) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।

১২ কোটি টাকায় সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অসত্য। তবে আমি বড় অংকের ফি পেয়েছি। আমার ক্লায়েন্টরা বড় অংকের টাকা পেয়েছেন, আমাকে বড় অংকের ফি দিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “আমরা তথাকথিত সামাজিক ব্যবসার ধ্বজাধারী সুদখোর ইউনূসকে ‘চুবানি’ দিয়েই সুদে-আসলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বন্ধুদের প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিয়েছি।”

আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম অবসায়নের জন্য দায়ের করা মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবিকৃত প্রাপ্য পাওনাদি পরিশোধের লক্ষ্যে আমাদের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের আদালতের বাইরে আপস-মীমাংসার প্রস্তাব দেন। তখন আমরা গ্রামীণ টেলিকমের বিজ্ঞ আইনজীবী, ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে কয়েকবার আলোচনার পর একটি সমঝোতায় উপনীত হই। ওই সমঝোতা চুক্তির শর্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ ৪ শতাংশ সুদসহ দিতে রাজি হয়। এর বিনিময়ে বিচারাধীন সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে সম্মত হয় শ্রমিক-কর্মচারীরা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, ওই সমঝোতার পর, মালিক কর্তৃপক্ষ এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ একত্রে বসে গত ২০১০-২০২২ সাল পর্যন্ত তাদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ হিসাব করেন এবং সে মোতাবেক মোট অর্থের পরিমাণ হয় ৪৩৭ কোটি টাকা। বিদ্যমান বিরোধটি আপসের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে মীমাংসার লক্ষ্যে গত ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেন। শর্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের নামে একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। যা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে এবং যেখান থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ওই অ্যাকাউন্টে চুক্তির শর্ত মোতাবেক ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়।

আইনজীবী বলেন, ‘লিখিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃক বর্ণিত সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়ার পর প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারী বিজ্ঞ তৃতীয় শ্রম আদালত, ঢাকাতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দিয়ে নিজ নিজ মামলা প্রত্যাহার করে নেন। একইভাবে তাদের অনুরোধে আমরাও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন সব রিট মামলা, আদালত অবমাননার মামলা এবং গ্রামীণ টেলিকম অবসানের প্রার্থনায় আনীত আলোচিত মামলা (কোম্পানি মামলা নং ২৭১/২০২১) প্রত্যাহার করি। ওই মামলাগুলো প্রত্যাহারের পর গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীরা সন্তুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্ট পেয়ী চেকের মাধ্যমে আমাদের ফিস দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ক্লায়েন্টদের মধ্যে যারা তিন কোটি বা তার বেশি পেয়েছেন, তারা ঠিক করেছিলেন ১৫-২০ লাখ টাকা করে দেবেন। আমার ১০০ জন ক্লায়েন্ট ৩ কোটি টাকার বেশি পেয়েছেন। এটা থেকে আপনারা ধারণা করতে পারেন আমি কত টাকা পেয়েছি। ক্লায়েন্টরা আমাকে হাসিমুখে ফি দিয়েছেন। তারা কারও কাছে অভিযোগ করেননি।’

এদিকে, হিসাব অনুযায়ী ১০০ জন ক্লায়েন্ট যদি ১৫ লাখ করে ফি দেন, তাহলে আইনজীবী ইউসুফ আলী পেয়েছেন ১৫ কোটি টাকা। আর ১০০ ক্লায়েন্ট ২০ লাখ টাকা করে ফি দিলে তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ২০ কোটি টাকা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী বলেন, ‘ফ্রিজ (জব্দ) হওয়া সব অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিল তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে আমার চেম্বারের অ্যাকাউন্টে সোয়া দুই কোটি টাকা ছিল।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

গ্রামীণ টেলিকম পরোক্ষভাবে ফি মামলা স্বীকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর