চতুর্থ দিনেও উপচে পড়া ভিড় কমলাপুর রেলস্টেশনে
৪ জুলাই ২০২২ ১১:২০
ঢাকা: টানা চার দিন ধরে ইদ ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর এ চার দিনই লোকে লোকারণ্য রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। টিকিট পেতে একদিন আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন প্রত্যাশীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলের স্বক্ষমতার চেয়ে কমপক্ষে পাঁচগুণ বেশি টিকিট প্রত্যাশী। আর কোরবানির ইদের সময়ে যাত্রীদের সংখ্যা একটু বাড়তি থাকে।
সোমবার (৪ জুলাই) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কাউন্টারের সামনে দীর্ঘলাইন। লাইনে দাঁড়ানো আশরাফ সুমন (২৫) বলেন, রংপুর যাওয়ার জন্য তিনি রোববার রাতে কমলাপুরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো তিনি টিকিট পেয়ে যাবেন। কারণ তার সামনে বেশি লোক নেই।
আরেক যাত্রী সোহেল রানা (৩৫) বলেন, এই দুর্ভোগেও একধরনের আনন্দ আছে। চারটি টিকিট নেবো। পরিবার নিয়ে ৮ জুলাই বাড়ি রওনা দেবো।
প্রতিবছরের মতো এবারও নারীদের জন্য আলাদা লাইন রয়েছে। এখানেও নারীরা ভোরে এসে লাইন ধরেছেন বলে জানালেন কয়েকজন। মাকসুদা বেগম (৪০) বলেন, আগের দিন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। তাই ভোররাতে এসে লাইন ধরেছেন।
টিকিটপ্রত্যাশী সীমা আক্তার (৩২) বলেন, নারীদের লাইন একটা, তাই ধাক্কাধাক্কি অনেক বেশি হয়। এখানে শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে।
ইদে ঘরে ফিরতে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে শত শত মানুষের ভীড় ছিলো সোমবারও। সোমবার (৪ জুলাই) বিক্রি হচ্ছে ৮ জুলাই ভ্রমণের টিকিট। টিকিট পেতে অনেকেই দুদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন অনেক যাত্রী।
আবার কেউ কেউ ৯ জুলাই ভ্রমনের টিকিট পেতে এখনি লাইনে দাঁড়িয়ে। এমন একজন যাত্রী শাহরিয়ার আলম (৪০)। তিনি বলেন, তার বাসা মুগধা এলাকায়। আগে থেকে লাইনে না দাঁড়ালে টিকিট পাওয়া সম্ভব না। দেখা যাবে দুপুর না হতেই জানিয়ে দেওয়া হবে আজ টিকিট শেষ। এই মানুষগুলো তখন কি করবে। কেউ কেউ থাকবে আবার কেউ চলে যাবে।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন লাইনে দাঁড়ানো মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মো. মনিরুজ্জামান জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। লাইন খুব আস্তে আস্তে আগাচ্ছে। গরমে এতো সময় দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার বলেন, ট্রেনের স্বক্ষমতার চেয়ে অন্তত পাঁচগুন টিকিট প্রত্যাশী। সেখানে তো রেলওয়ের পক্ষে সকলকে টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। সকলে টিকিট পাবেন না এটাই স্বাভাবিক। আমাদের লক্ষ্য যাতে টিকিট কালোবাজারি না হয়। টিকিট পেতে মানুষের হয়রানি না হয়। আগের ইদের মতো এবারও শৃঙ্খলভাবে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,
১ জুলাই বিক্রি হয়েছে ৫ জুলাই ভ্রমনের টিকিট, ২ জুলাই টিকিট বিক্রি হয়েছে ৬ জুলাই ভ্রমণের জন্য, ৩ জুলাই বিক্রি হয়েছে ৭ জুলাই ভ্রমণের টিকিট, ৪ জুলাই দেওয়া হচ্ছে ৮ জুলাই ভ্রমনের টিকিট এবং ৫ জুলাই টিকিট কেটে ভ্রমণ করতে পারবেন ৯ জুলাই।
এছাড়া ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। সেদিন বিক্রি হবে ১১ জুলাইয়ের টিকিট, ৮ জুলাই বিক্রি হবে ১২ জুলাই ভ্রমনের টিকিট, ৯ জুলাই বিক্রি হবে ১৩ জুলাই ভ্রমনের টিকিট, ১১ জুলাই বিক্রি হবে ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট। তবে ইদের কারনে বন্ধ থাকবে ১০ জুলাই।
রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকল উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনা গামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।
ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা যাবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেন ও দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট কেনা যাবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাওয়া যাবে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। এছাড়া জয়দেবপুর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পঞ্চগড়) এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।
সারাবাংলা/জেআর/এএম