Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২২ ১৪:৫৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করার বিষয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জুন মাসের ১৯, ২১ ও ২৮ তারিখে নির্বাচন ভবনে ইসির তিন ধাপের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইসির সংলাপে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এতে অংশ নিয়েছে ২৮টি রাজনৈতিক দল। বাকি ১১টি দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়নি।

ইসি সংলাপে অংশগ্রহণকারী ৫০ শতাংশ দল ইভিএমের বিপক্ষে। সংলাপে অংশ না নেওয়া দলগুলোও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। সেই হিসেবে মোট নিবন্ধিত দলের ৬৪ শতাংশ দল আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে বিভিন্নভাবে তাদের মতপ্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ১৩টি দল সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে, ১টি দল কেবল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছে। অবশিষ্ট ১৪টি দল মনে করে এই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। ইসির সংলাপে অংশ না নেওয়া ১১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলও আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ফলে নিবন্ধিত ২৫টি রাজনৈতিক দল মূলত আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইভিএমের বিষয়ে সংলাপ শেষ হলেও নির্বাচন কমিশন এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাইনি। ফলে আগামী নির্বাচন ইভিএমে, নাকি ব্যালটের মাধ্যমে হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশন বিভিন্নভাবে ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরছে। এতে ভোট সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা সম্ভব না হলেও ৭০ থেকে ১০০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন করতে আগ্রহী নির্বাচন কমিশন।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ব্যালটে হবে, নাকি ইভিএমে হবে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের সব আলোচনা লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের সামর্থ্য কতটা, তা দেখব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। ইভিএমে সম্পূর্ণ বা ফিফটি ফিফটি ব্যবহার করব কি-না সে সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, আগামী আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব। তখন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

সিইসি বলেন, ‘এর আগে আমরা দুটি সংলাপ করেছি। অনেকেই কিন্তু ইভিএমের পক্ষে বলেছেন। অনেকে সল্যুশন দিয়ে বলেছেন, যদি আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম ক্রয় করা যায়, তাহলে ভালো হয়। আবার অনেকে সরাসরি বলেছেন, আমরা ইভিএমে নির্বাচনে যাব না। আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করব, সেটা আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ইভিএমের সঙ্গে ইন্টারনেটের কোনো সম্পর্ক না থাকায় হ্যাকিংয়ের কোনো আশঙ্কা নেই।

সংলাপে ইভিএমের পক্ষে ১৪টি দল: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।এর বাইরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেবল স্থানী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে জাকের পার্টি,বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্প ধারা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি আগামী নির্বাচনে ইভিএ ব্যবহারের পক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।

ইসির সংলাপে ইভিএম ব্যবহার বিরোধী ১৪টি দল : প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, মুসলিম লীগ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক অন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, ইসলামিক ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ফ্রন্ট, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

ইসির ইভিএম সংলাপ বর্জন করা দলগুলো

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইসির সংলাপ বর্জন করে। এছাড়াও এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল। আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, চরমোনাইয়ের পিরের ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ ও ইসির সংলাপ বর্জন করে। এই সবগুলো দল আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে।

ইসির কাছে কী পরিমাণ ইভিএম রয়েছে

বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। প্রতিটি বুথে গড়ে ১.৫টি করে ইভিএম থাকে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি ইভিএমের বিপরীতে পাঁচটি ইভিএম ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়। এই হিসেবে ইসির কাছে যে ইভিএম রয়েছে তা দিয়ে এক লাখ বুথে ইভেএমে ভোট নেয়া সম্ভব। ফলে ইভিএম দিয়ে ১০০ থেকে ১২০টি আসনে ভোট নেয়া সম্ভব।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে ধারণা পাওয়া গেছে, আগামী নির্বাচনে বুথ হতে পারে আড়াই লাখ। সব আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হলে কমিশনের হাতে থাকতে হতো ৩ লাখ ৭৫ হাজার ইভিএম। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি এবং বুথ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এখন ভোটার ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। বছরে বাড়ে গড়ে ১৫ লাখের মতো। সেই হিসাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটার হতে পারে সাড়ে ১১ কোটির বেশি। ফলে নির্বাচনে কেন্দ্র আর বুথের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।

সারাবাংলা/জিএস/এএম

ইভিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর