হাওরের সড়ক সংস্কার নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীই শঙ্কিত
৪ জুলাই ২০২২ ২০:১৩
ঢাকা: ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো জীবদ্দশায় স্বাভাবিক অবস্থায় দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়েই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন খোদ পরিকল্পনমন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, গত ৩০-৩৫ বছরে হাওরে যে উন্নয়ন হয়েছে, বন্যায় তার সবটাই শেষ। সুনামগঞ্জের কোনো সড়কই আর অক্ষত নেই। গ্রামের ছোট ছোট সড়কগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সড়ক নির্মাণ তো খুবই কষ্টসাধ্য। জীবদ্দশায় সড়কগুলো স্বাভাবিক দেখতে পারব কি না, আমি এটা নিয়েই শঙ্কিত।
সোমবার (৪ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি (সাবিসাস) আয়োজিত ‘সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা: কারণ, পুনর্বাসন ও স্থায়ী সমাধান’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবিসাস সভাপতি আজিজুল পারভেজের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতীন উদ্দিন আহমেদ ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিসহ অন্যরা।
গোলটেবিল বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জীবদ্দশায় রাস্তাগুলো ফিরে পাব কি না, কিংবা রাস্তাগুলো আবার হয়েছে— তা দেখে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। হাওর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, তারচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রথমে ত্রাণ তারপর নির্মাণ। আমরা অতিসত্বর স্থাপনাগুলো পুনঃনির্মাণ কর্মসূচি গ্রহণ করব। সেটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। কৃষি পুর্নবাসনে সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হবে। আমরা সার ও বীজ বিনামূল্যে দেওয়ার চেষ্টা করব। মানুষ এখন আর খাদ্য সহায়তা চাচ্ছে না। এখন মানুষ চাচ্ছে নগদ টাকা (ক্যাশ)। অনেক মানুষ এখনো নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। কারণ অনেকের ঘর কাঁচা। সেসব কাঁচা ফ্লোর এখনো শুকায়নি। আমরা যদি তাদের চারটি খুঁটি ও ফ্লোর পাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে ঘরহারা মানুষগুলো দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে পারবে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল। প্রতিবছর যদি এমন বন্যা হতো, তাহলে প্রস্তুতি না থাকার কারণে সরকারকে দোষ দেওয়া যেত। এবার বন্যায় আমাদের মধ্যে সমন্বয়েরও অভাব ছিল।
তিনি বলেন, যারা নৌকার মালিক, তারাও তো পানির নিচে ছিল। কারণ তার কাছে একটি নৌকা-ই আছে। তিনি তো তার পরিবারকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। হয়তো তাই নৌকার ভাড়া এত বেড়ে গিয়েছিল।
ইমরান আহমেদ বলেন, এই প্লাবন থেকে আমাদের প্রস্তুতির শিক্ষা নিতে হবে। পুনর্বাসন এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষকে যদি ভালো ঘর বানিয়ে দিতে পারি, তাহলে এটি খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ হবে। পুনর্বাসনের জন্য ঘরের কী মডেল হবে, সেটি যত তাড়াতাড়ি করা যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শীতকালে সুরমা নদী হেটে চলে যাওয়া যায়। ড্রেজিংয়ের জন্যে শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। সরকারের ইমিডিয়েট ফান্ডে কোনো সমস্যা থাকলে খাল খননে স্পন্সর পাওয়া যাবে। সরকার বা বাইরের কোনো ফান্ডের টাকা আনতে আনতে তিনটা প্লাবন এসে যাবে। হাওর ডেভেলপমেন্ট ফান্ড বড় বড় মোটা মোটা বই করছে, কারণ যেন বিশ্বব্যাংকের ফান্ড পাওয়া যায়। তাই আমাদের আগে নদীগুলো খনন করতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, সুরমা ও কুশিয়ারা নদী এবং হাওরের জলাশয় খনন করা দরকার। এবারের বন্যায় প্রমাণ হয়েছে, আমরা কেউ বাঁচতে পারব না। কুশিয়ারা দিয়ে ভারত পর্যন্ত যাওয়া যেত। সেই কুশিয়ারা এখন মৃত। আমাদের সব নদী খনন করতে হবে। নদী-নালা খনন করতে হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের চিন্তাও আছে। পুনর্বাসনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ১৫ থেকে ১৬টি নদীর তথ্য থাকা জরুরি। ৫৪টি নদীর তথ্যই আমরা সংগ্রহ করব। তথ্য কাজে লাগুক বা না লাগুক, সবগুলো নদীর তথ্যই থাকতে হবে।
তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি করবেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বসে নেই। সিলেট অঞ্চলে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। নদীর ড্রেজিং প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। আমরা নদীগুলো খননের উদ্যোগ নেব।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
এ কে এম এনামুল হক শামীম পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সড়ক পুনরুদ্ধার সড়ক সংস্কার হাওরে বন্যা