ঢাকা: কোরবানির পশুর চামড়ায় লবণ লাগিয়ে বিক্রি করার জন্য অনুরোধ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, আসন্ন কোরবানির ইদে চামড়া ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সেজন্য চামড়া বিক্রির আগে লবণ মাখিয়ে রাখতে হবে। আর এ কাজটি করতে হবে কোরবানিদাতাকেই।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মকবুল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য পশু কোরবানির পর প্রয়োজনীয় লবণ যুক্ত করে কোরবানিদাতাকেই সংরক্ষণ করতে হবে। লবণ যুক্ত করার কারণে কোনো চামড়া নষ্ট হবে না। ফলে সময় নিয়ে উপযুক্ত দামে চামড়া বিক্রি করা যাবে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে এবং চামড়ায় লবণ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোরবানির ইদের আগে একটা শুক্রবার আছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে মসজিদে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের বলে দিতে পারেন। যাতে করে কোরবানির পর প্রত্যেকেই পশুর চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রাখেন। দেশের মসজিদগুলোতে এ বিষয়ে কোরবানিদাতাদের সচেতন করতে হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চামড়ার মূল্য গরিবের হক। এতিম খানা, মাদরাসা, আনজুমান মফিদুল ইসলামের মতো সংস্থাগুলোই বেশিরভাগ চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। গরিবদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। চামড়া ক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। দেশে প্রয়োজনীয় লবণ মজুত রয়েছে। এছাড়া লবনের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হাটে কোরবানির পশুর হাসিলার সময় পশু ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় লবণ ক্রয় নিশ্চিত করবে সিটি করপোরেশন। মাঠ পর্যায়ে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবার কোরবানির চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং নির্ধারিত মুল্যে ক্রয়-বিক্রয়ে কোন ধরনের সমস্যা হবে না এবং নষ্ট হবে না।’
অন্যদিকে তথ্য সচিব মকবুল হোসেন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পশুর চামড়ায় কোরবানিদাতাকে লবণ লাগিয়ে রাখার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ট্রাডিশন অনুযায়ী কোরবানি শেষে নিজেরাই চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রাখা হয় না। এটা আমাদের ট্রাডিশনে যায় না। তাছাড়া চামড়ায় লবণ মাখিয়ে রাখা একটা ঝামেলার বিষয়। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কোরবানির চামড়ার দাম কম হওয়ায় অনেকেই এতে আগ্রহী হবেন না। কোনো কোনো এলাকায় কোববানির পশুর চামড়ার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ফলে ১০০ টাকায় লবণ লাগিয়ে রাখা একটা বাড়তি খরচ হবে।’
এদিকে তথ্যসচিবের বক্তব্যের দ্বিমত পোষণ করেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা এত টাকা দিয়ে কোরবানি দিতে পারলে ১০০ টাকা লবণ কিনতে পারব না! গরু কেনার সময় আমাদের লবণ কিনে রাখতে হবে। কোরবানি পশুর চামড়ায় লবণ লাগিয়ে বিক্রি করতে হবে। লবণ না লাগানোর ট্রাডিশান ভাঙ্গতে হবে।’
আর শিল্প সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা এত টাকা দিয়ে কোরবানি দিতে পারলে লবণ মাখিয়েও রাখতে পারব। আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনে কোরবানির পশু কেনার সময়ই লবণ কিনে রাখতে হবে। অথবা কোরবানি গরুর কেনার সঙ্গে লবণ কেনার জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা বাজেট রাখতে হবে।’
উল্লেখ্য, চামড়ার স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার দর, চাহিদা, সরবরাহ, রফতানির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৭-৫২ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা, খাসির চামড়া সর্বত্র ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া সর্বত্র ১২-১৪ টাকা ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।