‘শিক্ষক হেনস্থা বন্ধে নীতিমালা নয়, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা’
৬ জুলাই ২০২২ ১৮:৫৩
ঢাকা: নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্ত করা হয় গত ১৮ জুন। পুলিশের সামনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা গোটা বাংলাদেশকে নাড়া দিয়েছে। এর ক’দিন পরেই গত ২৫ জুন সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা শুধু শিক্ষক সমাজই নয়, সব মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আর নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয় ২০১৭ সালে ফেসবুকে পোস্টের জেরে সম্প্রতি শিক্ষক উৎপল দাসকে শাস্তি দেওয়ার ঘটনা।— এই সব ঘটনায় শিক্ষকদের নিরাপত্তায় আলাদা নীতিমালা তৈরিও দাবি উঠেছে বিভিন্ন আলোচনায়। তবে খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করে বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতা।
বুধবার (৬ জুলাই) সচিবালয়ে এক বিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি একজন সনাতন ধর্মের শিক্ষককে প্রায় টার্গেট করে নানান ধরনের উসকানিমূলক কথা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাদের আক্রমণ করা হয়েছে। একজন শিক্ষককেও হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যখনি শিক্ষকের কথা ভাবি যেটা নড়াইলে ঘটেছে, সেটা আমরা কখনও চিন্তা করতে পারি না। এ ঘটনা তদন্তে কতগুলো কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা তদন্ত করে এসেছেন তারা মৌখিকভাবে একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন, আমি সেটা শুনেছি। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, একটা ঘটনা ঘটল আর আমরা প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিলাম; এতে কিন্তু সমাধান হবে না।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘একধরনের অসহিষ্ণুতা সেটিকে উসকে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতাকে উপজীব্য করা হচ্ছে। আমরা অতীতেও দেখেছি, যখন সমাজে বা দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হবে। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। সেই জায়গাটিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। যখন একজন শিক্ষককে একজন ছাত্র প্রহার করছে সেখানে অনেক লোকজন ছিল, তাদের কি করণীয় ছিল? আমরা কি মানুষ হিসেবে আমাদের স্বাভাবিক করণীয়গুলো ভুলে যাচ্ছি। সেই বিষয়গুলো ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিকতা বোধ, সহমর্মিতা, একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ শিক্ষার মূল ধারার মধ্যে নিয়ে আসার। তাতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তন আসবে বলে আশা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেবে শুধু লজ্জিত বা দুঃখিতই নই; আমি মনে করি, সকল শিক্ষক যে পর্যায়েরই হোক কেন শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তাদের ক্ষোভ আছে, কষ্ট আছে। আমরা যারা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত তারা সেই বোধটা অনুধাবন করতে পারছি। আমরা তাদের পাশে আছি। এ সমাজে যাতে আর কোনো শিক্ষকের মর্যাদা ভূ-লুণ্ঠিত না হয় সেজন্য আমাদের প্রত্যেকর করণীয় রয়েছে। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি মন্ত্রণালয় বা প্রশাসনের দায়িত্ব হতে পারে না।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোনো পেশা বা সম্প্রদায়কে নীতিমালা করে নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। আমাদের যে আইন রয়েছে সেখানে কোনো ফাঁক-ফোকর নেই। এ ধরনের ঘটনার বিচারের মত সকল ব্যবস্থা আইনে রয়েছে। আমাদের সামাজিক সচেতনা তৈরি করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন ধর্মের নামে উন্মাদনা ছড়িয়ে এমন ঘটনা ঘটায় কোনো মহল, সেটা কিন্তু দেশের সকলকেই ছুঁয়ে যায়। কাজেই আমাদের সচেতন হতে হবে। এগুলো যারা করছে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই করছে, পরিকল্পিতভাবে ছক অনুযায়ী করছে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।’
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম