বিনোদ বিহারী-নূতন সিংহের নামে ইডিইউতে বৃত্তি চালু
৬ জুলাই ২০২২ ২০:৫১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী প্রয়াত বিনোদ বিহারী চৌধুরী এবং ফাঁসিতে দণ্ডিত মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হাতে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ নূতন চন্দ্র সিংহের নামে পৃথক দু’টি বৃত্তি চালু করেছে চট্টগ্রামের বেসরকারি ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ)। সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বুধবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ইডিইউতে ডেটা অ্যানালিটিক্স অ্যান্ড ডিজাইন থিংকিং ফর বিজনেস ও এমএ ইন ইংলিশ বিষয়ে ভর্তি হলেই শিক্ষার্থীরা এ দুই বৃত্তির অধীনে টিউশন ফিতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড় পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আবদুল্লাহ আল নোমানের সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান এবং উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খানের দু’টি বক্তব্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘নূতন চন্দ্র সিংহ ও বিনোদ বিহারীর সঙ্গে আমার বাবার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল। বাবার অনুপ্রেরণায় এ দু’জন কৃতি ব্যক্তিত্বের নামে বৃত্তির প্রস্তাব রাখি আমি।’
উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেছেন, ‘ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে। ইডিইউ কর্তৃপক্ষের বাংলার ইতিহাসের কৃতী ব্যক্তিত্বদের সম্মানিত করার উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগে মাস্টার অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড লিডারশিপ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।’
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বনেদি পরিবারের সন্তান নূতন চন্দ্র সিংহ ‘দানবীর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাউজানে বিভিন্ন শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাউজানে নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা রাউজানের গহিরায় নূতন চন্দ্র সিংহের কুণ্ডেশ্বরী ভবনে আশ্রয় নেন। পরে তাদের নিরাপদে ভারতে পাঠাতে সহায়তা করেন তিনি। অন্যরা নিরাপদে দেশ ছাড়লেও নিজ বাড়িতেই ছিলেন নূতন চন্দ্র সিংহ।
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকালে রাউজানের গহিরার কুণ্ডেশ্বরীতে নিজ বাড়ির মন্দিরের সামনে হত্যা করা হয় নূতন চন্দ্র সিংহকে। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে গিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেই নূতন চন্দ্রকে গুলি চালিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরকে যে কয়টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তার মধ্যে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাও রয়েছে।
বিনোদ বিহারীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। অগ্নিযুগের বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা ছিলেন তিনি। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সময় চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার লুট করে ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সূর্যসেন ও তার সহযোগীরা, যাদের মধ্যে বিনোদ বিহারীও ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দেশের সব সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রবর্তী সৈনিক। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, জঙ্গিবাদবিরোধী, সমাজের অধিকার আদায় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবীণ বয়সেও রাস্তায় নেমেছিলেন এই চির সংগ্রামী পুরুষ। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
একসময়ের বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও পরে বিএনপিতে যোগ দেওয়া আবদুল্লাহ আল নোমানের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। নূতন চন্দ্র সিংহ ও তার পরিবারের সদস্য এবং বিনোদ বিহারীর সঙ্গে নোমানের ঘনিষ্ঠতা ছিল।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি নূতন চন্দ্র সিংহ বিনোদ বিহারী চৌধুরী