বরিস এখন ‘তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী’
৮ জুলাই ২০২২ ১১:৪১
টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ওই সময় জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ তিনি ছাড়ছেন না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারলেন না। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলেও তিনি মূলত ব্রিটেনের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন। নতুন মন্ত্রিসভাও এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের চাপে বরিস জনসন তার অনড় অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এর মধ্যে দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতৃত্ব তথা ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পথ তৈরি হলো। পার্টির নেতারা বলছেন, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়াও শিগগিরই শুরু হবে।
বরিসের নতুন মন্ত্রিসভায় ওয়েলশ বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রবার্ট বাকল্যান্ড। তিনি বলেন, বরিস জনসন মন্ত্রিসভাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই কেবল কাজ চালিয়ে নেবেন। তবে দলের মধ্যে অনেকেই তাকে এই সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে রয়েছেন। তারা অবিলম্বে কাউকে বরিসের স্থলাভিষিক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
বরিস নিজেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা। আগামী সপ্তাহেই নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের প্রক্রিয়ার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে বলেছেন, ভোটাররা তাকে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে বলেই তিনি তাদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছেন।
দলের এমপি-মন্ত্রীদের চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেও এ বিষয়টিকে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করছেন বরিস। তিনি বলেন, আমরা ব্রেক্সিট করেছি। কোভিড মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তার ক্ষেত্রে আমাদের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য দারুণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আমি আমার সহকর্মীদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে এখন সরকারে পরিবর্তন আনা হবে ‘পাগলামি’। সহকর্মীরা আমার যুক্তি মানেননি। এটি অত্যন্ত ‘দুঃখজনক’।
করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে যখন ব্রিটেনে লকডাউন চলছিল, সেই সময়ে ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি আয়োজন নিয়ে পুলিশি তদন্তসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে বরিস জনসনের নাম। এসবের জের ধরে গত দুই বছরে দলের মধ্যেই অনেকের আস্থা হারান তিনি। চাপও বাড়তে থাকে তার ওপর। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পদত্যাগ করেন।
তাদের দু’জনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বরিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকট হয়ে ওঠে। দলের সংসদ সদস্যরাও সরে দাঁড়াতে থাকেন, পদত্যাগ করতে থাকেন সরকারি কর্মকর্তারাও। দলের মধ্যে দাবি ওঠে, বরিস যেন পদত্যাগ করেন।
বরিসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান খোদ তারই মন্ত্রিসভার সদস্য মাইকেল গোভ। কিন্তু বরিস মরিয়া ছিলেন ক্ষমতায় থাকার জন্য। গোভকে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্তই করে দেন। কিন্তু তাতে চাপ আরও বাড়তে থাকে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলেন, বরিসের সরে দাঁড়ানো উচিত। বিরোধী দল লেবার পার্টি তো বলেই বসে, সরে না দাঁড়ালে সংসদে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়তে হবে বরিসকে। সব মিলিয়ে আর নিজ অবস্থানে থাকতে পারলেন না বরিস জনসন। ব্রিটেনকে তাই খুঁজতে হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী।
এর মধ্যে অবশ্য নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছেন বরিস জনসন। তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তার নেতৃত্বে এই মন্ত্রিসভা কাজ করবে। তবে আর্থিক নীতি, রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এই মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে না। এসব সিদ্ধান্ত নিতে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সারাবাংলা/টিআর