Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমাপনীর প্রশ্নপদ্ধতি বদল: বিভ্রান্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবক


২২ এপ্রিল ২০১৮ ০৮:৪৮

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

ঢাকা: ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস চলছে। বছরের ১২ মাসকে যদি তিনভাগে ভাগ করা হয় তবে, এর এক তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে। শেষ হয়ে গেছে ত্রৈমাসিক ক্লাস পরীক্ষাও। এর মধ্যে গত ১২ এপ্রিল জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ) থেকে নির্দেশ এসেছে, প্রশ্নপত্র পদ্ধতি পরিমার্জনের। সব বিষয়ে পরিমার্জন খুব সমস্যা না হলেও, গণিত বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিভ্রান্ত।

বিজ্ঞাপন

কী পরিবর্তন এসেছে পরিমার্জিত প্রশ্ন কাঠামোতে?

১২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে নেপ থেকে প্রকাশিত একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, প্রথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা-২০১৮ তে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন বাদ দিয়ে শতভাগ যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্রের পরিমার্জিত কাঠামোতে পরীক্ষা নেয়া হবে।
নেপ এর মহাপরিচালক মো. শাহ আলম সারাবাংলাকে জানান, প্রশ্নপত্রের পরিমার্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা প্রয়োজন মতো করা হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় কখনও বাঁধা হয় না।

এবারের পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মূলত নকল বন্ধের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

অভিভাবকরা কী বলছেন?

প্রশ্নপত্রের হঠাৎ পরিমার্জনের ফলে বিভ্রান্ত অভিভাবকরা। রাজধানীর শের-এ-বাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, বছরের মাঝে এসে এই পরিবর্তনের তিনি ভীত। তিনি আশঙ্কা করছেন, এই বদলে তার সন্তান মানিয়ে নিতে পারবে না।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, তিনি শুধু জানেন পরিবর্বতন এসেছে। তবে সেটি কেমন? কীভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
শহরের অভিভাবকদের যেখান এ অবস্থা সেখানে গ্রামের অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত অভিভাবকরা আছেন আরও বিপদে। তাহমিনা বেগম সেরকম একজন অভিভাবক। তার সন্তানরা জামলপুরে একটা স্কুলে পড়াশোনা করে, তিনি এবং তার স্বামী ঢাকায় থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাহমিনা বলেন, স্যাররা বলছেন প্রশ্ন আগের চেয়ে কঠিন হয়েছে। আমি ভয় পাচ্ছি এ অবস্থায় তারা (সন্তানরা) পাশ করবে কি-না।

বিজ্ঞাপন

কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা ?

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর প্রশ্নপত্রের পরিমার্জন বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে তাদের উদ্বেগ জানান।
শিক্ষার্থীরা আশংকা করছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা পরীক্ষা শেষ করতে পারবে না। পাশাপাশি যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন অংশে কেমন প্রশ্ন আসবে তাও পরিষ্কার না তাদের কাছে।

শিক্ষকদের মতামত কী ?

নতুন প্রশ্নপত্র নিয়ে মিশ্র অনুভূতি শিক্ষকদের মধ্যে। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির গণিত শিক্ষক আবু রায়হান সারাবাংলাকে জানান, প্রশ্নপত্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শিক্ষার্থীদের সময় লাগে। এই সময়টা তাদের দেয়া উচিত ছিল। এ ছাড়া মান বন্টনের বিষয়ে সব প্রশ্নে সমান মান থাকলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হতো।
সময়ের মধ্যে প্রতিটা প্রশ্ন শেষ করতে পারার বিষয়ে চিন্তিত এ শিক্ষক। তিনি মনে করছেন, যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে শিক্ষার্থীরা হিমশিম খাবে।

এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক নাঈমা আফরোজ পরিবর্তিত এ প্রশ্ন পদ্ধতিতে অসন্তুষ্ট নন। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের যদি পুরো বই ভালো করে পড়ানো হয় এবং ঠিকমতো অনুশীলন করানো হয় তবে এটা খুব বড় সমস্যা নয়।

তবে নাঈমা আফরোজ ভীত যে প্রাথমিক শিক্ষকদের সকলের মান একরকম নয়। এ অবস্থায় খাতা যদি অদক্ষ কোনো শিক্ষকের হাতে পড়ে তবে শিক্ষার্থীর সঙ্গে সুবিচার নাও হতে পারে।
তিনি আরও জানান, প্রশ্নকাঠামো পরিবর্তনের বিষয়গুলো বোর্ড এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বেসরকারি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের ভূমিকা খুব কম থাকে। ফলে ব্যবস্থা যাই আসুক তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

এদিকে সমাপনী পরীক্ষার বিপক্ষে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। তিনি বলেন, ১২ বছর শিক্ষাবর্ষ, আর এর মধ্যেই চার চারটি পাবলিক পরীক্ষা। এতো এতো পরীক্ষা আখেরে কোনো কাজে লাগে না। এখন শিক্ষার্থীরা তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রাথমিক সমাপনীর পেছনে দৌড়াতে শুরু করে। যে কারণে কোনো বিষয়ের গভীরে যেতে পারে না। এভাবে তাদের শিক্ষার ভিত দুর্বল থেকে যাচ্ছে। গণিতে বিষয়টি আরও ভয়াবহ। তারা গণিতে দুর্বলতা নিয়েই মাধ্যমিকে পা দিচ্ছে।

তার মতে, পরীক্ষার সংস্কার নয়, পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা তুলে দিয়ে আগের নিয়মে ফিরে গেলেই বরং শিক্ষার্থীদের গণিতের দক্ষতা বাড়বে।

সারাবাংলা/এমএ/এমএস

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর