Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পশুর হাটে চলছে শেষ মুহূর্তের স্নায়ুযুদ্ধ

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৯

রাজধানীর পশুর হাট ঘুরে ছবিগুলো ক্যামেরাবন্দি করেছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সুমিত আহমেদ।

ঢাকা: কোরবানির পশুর হাটের বাকি আর মাত্র দুইদিন। বাজারের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাবিক্রেতাদের মধ্যে ততই চাপ বাড়ছে বিকিকিনির। পশুর চাহিদা বাড়লে দুই পয়সা বেশি পাবেন, এই আশায় গরুর রশি শক্ত হাতে ধরে আছেন এক শ্রেণির বিক্রেতা। অন্যদিকে সুযোগ সন্ধানী কিছু ক্রেতাও আছেন শেষ সময়ের অপেক্ষায়। চাহিদা কমে গেলেই ঝোপ বুঝে কোপ মারবেন তারা। তবে যেকোনো মুহূর্তে উল্টে যেতে পারে পাশার দান। লাভের আশায় উভয়পক্ষকেই টানতে হতে পারে লসের বোঝাও। এই অবস্থায় শেষ মুহূর্তের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে।

হাজারীবাগ পশুর হাট-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাটে এখন পর্যন্ত পশুর আমদানি পর্যাপ্ত। মূলত কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, রাজবাড়ী, নওগাঁ, রাজশাহী থেকে ব্যাপারীরা এই হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। গত কয়েক দিন গরুর দাম সন্তোষজনক হলেও শুক্রবার বিকেল চারটা পর্যন্ত বাজারে কেনাবেচা ছিল কম। এখন সব কিছু ছাপিয়ে আগামী দুই রাত গরু বেচাবিক্রি কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করছে হাটে আসা বিক্রেতাদের ‘বাজার ভাগ্য’।

শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, জুম্মার নামাজের পর হাজারীবাগ গরুর হাটে ক্রেতারা ঢুকতে শুরু করে। এর আগে একদিকে প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে জুম্মা নামাজের দিন হওয়ায় সকালটা প্রায় ক্রেতা শূন্য ছিল। এদিন সকাল থেকে খুব একটা গরুর কেনাবেচা হয়নি। বিক্রেতাদের ধারণা, শুক্রবার রাতে বিক্রি বাড়বে। এই সময়ে রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যাবে। ক্রেতা সহজেই ক্রয়কৃত গরু বাসায় নেওয়া ও রাখার ব্যবস্থা করতে পারবে।

হাজারীবাগ হাটে শফিক ট্যানারির মোড় থেকে বা দিকের খলিল সরদার মসজিদ, সেখান থেকে ডান দিকের বাজার হয়ে আশপাশের ছোট-বড় রাস্তায় হাট বসানো হয়েছে। রাস্তার ওপরে কোথাও ২ আবার কোথাও কোথাও ৪ সারি পর্যন্ত পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের ঘর্মাক্ত চেহারা লক্ষ্য করা গেছে। রাস্তার ওপর কোথাও গোবর, খড়কুটাসহ আবর্জনা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে।

শফিক ট্যানারির মোড়ে একটি পকেট কাউন্টারে হাসিল পরিশোধ করছিলেন ধানমন্ডির ব্যবসায়ী রফিক মিয়া। তিনি মাঝারি থেকে কিছুটা ছোট আকারের একটি গরু কিনেছেন ৭২ হাজার ৫০০ টাকায়। গরুটির বিক্রেতা নওগাঁর মাসুদ আলী।

হাসিল পরিশোধের স্থান থেকে সামনে কয়েক গজ এগিয়ে দুইজন ক্রেতা দুইটি গরুর দরদাম করছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে শোনা যায়, বড় গরুর ক্রেতা বিক্রেতার উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘নিচে নামলে দুইয়ের নিচে নামো।‘ মাঝারি সাইজের গরুর দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলছেন, ‘এটা নিচে নামলে একের নিচে নামো। না হলে চইলা যামু গা।’

এদিকে তিনজন মিলে মাঝারি ও ছোট সাইজের ১৩টি গরু হাটে নিয়ে এসেছিলেন নওগাঁর মাসুদ রানা। ইতোমধ্যে তার ভাগের একটি বাদে সব গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তবে বাকি দুইজনের ভাগের এখনো তিনটি গরু অবিক্রিত। মাসুদ রানা সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তিনজনসহ চারটা দেখাশোনার লোক আছি হাটে। আগেরগুলো বেচে লাভ হইছে মোটামুটি। মিথ্যা কইয়া পাপ কইয়া লাভ কী?

তিনি বলেন, আমার চাচাতো ভাইটার বেশি মোহরা, সে চার পাঁচটা বড় গরু আইনছে। একটাও বিক্রি করে নাই। এখন বাজারের অপেক্ষায় আছে। বাজার যদি জমে কপাল ভালো, না হলে এবার লস গেল।

কুষ্টিয়া থেকে দুইটি মাঝারি এবং একটি বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন ২৪ বছর বয়সী রাজা মিয়া। মাঝারি গরু দুইটা মোটামুটি লাভে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন বড় গরুর বিক্রির। যে গরুর দাম ৩-৪ লাখ হবে বলে আশা করছেন। কিন্তু ক্রেতারা এখনো দুই লাখের বেশি দাম বলেননি। তাই দুঃশ্চিন্তায় আছেন। এবারই তিনি হাজারীবাগ গরুর হাটে প্রথম এসেছেন। তাই আজ যদি শেষবেলায় কোনো ক্রেতা দুই লাখের ওপরে দাম বলেন তাহলেই গরুটি বিক্রি করবেন বলে জানান।

কারণ উল্লেখ করে রাজা মিয়া বলেন, বড় গরুর লস হলে লাখ লাখ লস। আর ছোট বা মাঝারি গরুতে লস হলেও কত হবে? ২০ হাজার ২৫ হাজার বা ৩০ হাজার কিন্তু চার লাখের গরুতে লস ১ লাখও হতে পারে, ২ লাখও হতে পারে। গত ইদে একটা বড় গরু ৬ লাখে বিক্রি করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তাই আজ রাতেই বড় গরুটা বিক্রি করতে হবে।

সারাবাংলা/এনআর/এএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর