ঢাকা: আসন্ন পবিত্র ইদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটিসহ মোট ১১টি বেসরকারি ব্যাংক ৪৪৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক দেবে ২৫৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে জনতা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, করোনা পরবর্তী ব্যবসায় টিকে থাকতে চাহিদার তুলনায় এবার যে পরিমাণ টাকা ঋণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, তা আগের বছরের চেয়ে কম। আবার ঋণ পেতেও রয়েছে ভোগান্তি।
তিনি বলেন, চামড়া খাতকে টিকিয়ে রাখতে এই খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, চামড়া খাতে ব্যবসা মন্দ ও নিয়ম মতো ঋণ পরিশোধ না করায় এই খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা রয়েছে। চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় আগের মতো ঋণের প্রয়োজনও পড়ছে না। এছাড়াও চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক সতর্ক। এসব কারণে প্রতিবছর দেশে পশু কোরবানির সংখ্যা বাড়লেও ঋণের পরিমাণ কমছে।
আসন্ন ইদুল আজহায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ট্যানাররা ৪৪৩ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ২৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাকি ১৮৫ কোটি টাকা দেবে বেসরকারি খাতের ৭টি ব্যাংক।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা প্রস্তুত রেখেছে। গত বছর একই পরিমাণ ঋণ প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল মাত্র ৪০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। অগ্রণী ব্যাংক দেবে ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭০ কোটি টাকা ঋণ দিতে চায় ইসলামী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাকি ব্যাংকগুলো হল আল–আরাফাহ্ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই ফেরত না আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালে ইদুল আজহার আগে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিপরীতে ব্যবসায়ীরা ঋণ পেয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে বরাদ্দ রাখা হয় ৫৮৩ কোটি টাকা, কিন্তু অর্ধেকেরও কম ঋণ বিতরণ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে। এর ফলে আগের দেওয়া ঋণ খেলাপি হলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল করা যাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে, কোরবানির ইদে চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি শিল্পের অনুকূলে ৫০০-৬০০ কোটি টাকা ঋণ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ট্যানারি মালিকরা।