Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি: হাল ছেড়ে দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ জুলাই ২০২২ ২২:২০

ঢাকা: প্রতিবছর কোরবানি ইদ এলেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পশুর হাটের বর্জ্য সরাতে না সরাতেই পশু কোরবানির বর্জ্য সরাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এ সমস্যার সমাধানে নিজ নিজ বাসায় কোরবানি না দিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে প্যান্ডেল টানিয়ে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করেও নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়নি। ফলে এবার অল্প কয়েকটি এলাকা ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কোরবানির জন্য থাকছে না নির্ধারিত স্থান।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালে করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন দুই সিটি করপোরেশন থেকে কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারিত করে দেয়। সেসময় দ্রুত বর্জ্য অপসারণ আর নগরবাসীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মোট ৬৪৫টি নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানির অনুরোধ করেন দুই মেয়র। কিন্তু এ ব্যবস্থাপনা খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি।

২০২১ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) এলাকায় প্রায় ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯০টি (আনুমানিক) পশু কোরবানি হলেও করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ১৪৪টি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০২১৯ সালের পর থেকে আর নির্ধারিত স্থানে কোরবানির ব্যবস্থা রাখেনি।

দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে— নির্ধারিত প্যান্ডেলে নগরবাসী যেন সুন্দর ও সুচারুভাবে পশু কোরবানি করতে পারেন, তার যাবতীয় বন্দোবস্ত করেছিলেন তারা। এ সব সুবিধা থাকার পরও নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানিতে আগ্রহ দেখাননি নগরবাসী। ইচ্ছামতো যেখানে সেখানে কোরবানি দিয়েছেন। ফলে তারা এবার আর পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত প্যান্ডেল রাখছেন না।

তবে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের নয়টি স্থানে কোরবানির জন্য নির্ধারিত জায়গা রাখা হয়েছে। আর দক্ষিণে শুধুমাত্র জাজেস ও অফিসার্স কোয়ার্টারে এ ব্যবস্থা থাকবে। বাকি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যেখানে ইচ্ছা সেখানে কোরবানি দিতে পারবেন।

ডিএসসিসির মুখপত্র আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, ‘যত্রতত্র কোরবানি দিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়। দেখা যায় একই জায়গা বারবার পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু একটি ওয়ার্ড তিনবারের বেশি পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। এ সব সমস্যা সমাধানে যে কয়েক বছর পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে নগরবাসীর খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। এ জন্য কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে বোর্ডসভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পশু কোরবানির জন্য আর কোনো জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে না।’

বিজ্ঞাপন

ডিএনসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েক কোটি টাকা খরচ করে পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে সেখানে যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসী পশু কোরবানি দিতে আসেনি। এ জন্য এবার উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকা ছাড়া আর কোথাও এ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ডিএনসিসির ৪১, ৪৩ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর অনুরোধে এখানকার নয়টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’

জানা গেল এ সব প্যান্ডেলে সিটি করপোরেশন থেকেই সব ব্যবস্থাপনা থাকে। থাকে মাংস নেওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা। পশু জবাই করার লোক এখানেও থাকে বা কেউ চাইলে সঙ্গে করেও আনতে পারে।

এতসব সুবিধা থাকার পরেও নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মকবুল হোসেন বলেন, ‘নিজের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা থাকে অনেকের। বিষয়টার সঙ্গে আবেগ জড়িত থাকায় এটি নিয়ে জোর করা হয় না।’

প্রতিটি ওয়ার্ডেই যদি লোকজন নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতো সেক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজ হয়ে যেত বলে জানালেন দুই সিটি কর্তৃপক্ষই।

যেখানে সেখানে কোরবানি দিয়ে তা ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানালেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

তিনি বলেন, ‘যত্রতত্র পশু বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টির পাশাপাশি এটি ড্রেনেজ সিস্টেমে মিশে জলাশয়ে মিশে সেগুলোকেও দূষিত করে ফেলে। এর জন্য নির্দিষ্ট জবাইখানা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুব্যবস্থাপনা আছে এমন স্লটার হাউজ থাকলে নগরবাসী ঠিকই উদ্বুদ্ধ হবে সেসব জায়গায় যেতে। দুই সিটি করপোরেশনকেই তাই সঠিক নগরব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি ও সংগঠিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/একে

করোনাভাইরাস জবাইখানা টপ নিউজ পশু কোরবানি সিটি করপোরেশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর