নামাজের পর কোরবানির ধুম, বর্জ্য অপসারণে চসিক
১০ জুলাই ২০২২ ১২:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইদুল আজহার উৎসবে শামিল হয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসব ইদুল আজহার নামাজে আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মহিমায় মানুষকে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদে রোববার (১০ জুলাই) সকালে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। এরপর শুরু হয় পশু কোরবানি। তবে গত দুই বছরের চেয়ে এবার নগরীতে কোরবানি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর্মীরা।
চসিকের তত্ত্বাবধানে সকাল পৌনে ৮টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ইদুল আজহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেছেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। একইস্থানে সকাল পৌনে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় জামাত।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রথম জামাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ নামাজ আদায় করেন। তবে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন রাজনীতিক-জনপ্রতিনিধিরা।
চট্টগ্রাম নগরীতে এবার সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৮টি স্থানে ইদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— শেখ ফরিদ চশমা ইদগাহ জামে মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফিন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরু বাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দীক চসিক জামে মসজিদ।
এছাড়া চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে ইদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ইদ জামাত কমিটির উদ্যোগে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন মসজিদে ইদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার এলাকার জনগণসহ দেশ ও জাতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। যারা কোরবানি দিচ্ছেন, সবার প্রতি অনুরোধ- কোরবানির চামড়া যেন আমরা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এই চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। চামড়া আমরা বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করি। সেই মুদ্রা দিয়ে আমরা জ্বালানি ক্রয় করি। আপনারা জানেন, বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সারাবিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এটা আমাদের জন্যও একটা বড় সংকট। আমরা যেন সবাই সম্মিলিতভাবে এই সংকট মোকাবেলা করতে পারি, এ বছরের ইদুল আজহায় এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
নামাজ আদায়ের পরপরই নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তায়, মাঠে, বাসা-বাড়ির সামনে কোরবানি শুরু হয়। পশু জবাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩০৪টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে কোরবানির জন্য সিটি করপোরেশনের আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি।
কোরবানি শুরুর আগে সকাল থেকেই বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এবার চসিকের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণে ৩৪৫টি গাড়ি নিয়ে নিয়োজিত আছেন ৫ হাজার কর্মী।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সকাল ৮টা থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা করপোরেশনের নিজস্ব ২৪৫টি গাড়ি নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। সকাল ৯টা থেকে ভাড়ায় নেওয়া ১০০টি গাড়ি নামানো হয়। এরপর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আরও ১১টি গাড়ি নিয়ে ১১টি টিম তদারক করতে নেমেছে। তদারকিতে আছেন ১১০ জন কর্মকর্তা। পশুর চামড়া, লেজ-মাথাসহ শরীরের অবশিষ্টাংশ যাতে যত্রতত্র ফেলতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় আছে চসিক।
এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়জন কাউন্সিলরকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তাদের সঙ্গে আছেন তিনজন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
চসিক নিয়মিত আড়াই হাজার টন এবং কোরবানির ৫ হাজার টন মিলিয়ে সাড়ে ৭ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। চসিক মেয়র সকাল ৯ টা থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে বর্জ্য পুরোপুরি অপসারণের সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবে এরপরও চসিকের টহল টিম কাজ করবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর মোবারক আলী।
কাউন্সিলর মোবারক আলী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘গত দুই বছর করোনা, লকডাউন-নানা কারণে কোরবানির পশু জবাই কিছুটা কম ছিল। এবার পশু জবাই গত দুই বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এবার কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট আট লাখ ২১ হাজার পশু। এর মধ্যে গরু পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৩, মহিষ ৬৬ হাজার ২৩৭, ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৮৯ হাজার ৬২ এবং অন্যান্য ৯৯টি পশু রয়েছে। ২০২১ সালে সাত লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি পশু কোরবানি হয়েছিল।
এদিকে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে কেউ যাতে যত্রতত্র ফেলে যেতে না পারে সেজন্যও সতর্ক অবস্থায় আছে পুলিশ।
কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু ফড়িয়া চামড়া নিয়ে আসে। বিক্রি করতে না পেরে সেগুলো ফেলে চলে যায়। এটা আমরা এবার করতে দেব না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরও জানিয়েছিলেন, চামড়া ফেলে যাওয়ার বিষয়টি পুলিশও মনিটরিং করবে। এ ধরনের কিছু দেখলে তারা সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিত করবে।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস