‘বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বেড়েছে’
১০ জুলাই ২০২২ ২০:৩২
ঢাকা: ইদের আনন্দে বাধা হয়নি বৃষ্টি। নামাজ শেষে পশু কোরবানি আর রান্না-খাওয়ায় উৎসবের আমেজে ইদুল আজহা উদযাপন করছেন সারা দেশের মুসলিমরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কারেও লক্ষ করা গেছে ভিন্ন চিত্র। দুপুর তিনটা পর্যন্ত অলিগলিতে কোরবানির বর্জ্য রাখা হলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিটি করপোরেশনের তদারকি ও জনগণের সচেতনতার কারণে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসীসহ সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (১০ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে জিগাতলা, হাজারীবাগ, রায়েরবাজার, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাজারীবাগ এলাকার দুটি বাড়ির বাসিন্দাদের মতো এবার রাজধানীর অনেক জায়গাতেই ব্যাগে কোরবানির বর্জ্য ভরে রেখে দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য এসব বর্জ্য রেখে দেওয়া হয়েছে। যারা সিটি করপোরেশনের ব্যাগ পাননি, তারা নিজেরা অনেকে পলিথিন ব্যাগ সংগ্রহ করে বর্জ্য ভরে রেখেছেন।
রাজধানীবাসীর এ সচেতনতাকে ইতিবাচক ব্যাপার বলে মনে করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা। তারা জানান, মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়েছেন। সিটি করপোরেশনের পলিব্যাগে বর্জ্য ভরে রেখে দিয়েছেন। নিজেরাই নিজেদের এলাকার কোরবানির রক্ত পরিষ্কার করেছেন। নগরবাসীর সহযোগিতা পেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।
এর আগে, রাজধানীতে ইদের প্রধান জামাত হয় বুধবার সকাল ৮টায় জাতীয় ইদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভার সদস্য আর বিচারপতিসহ সর্বস্তরের মানুষ সেখানে ঈদের নামাজের পর দেশবাসীর কল্যাণ কামনায় মোনাজাতে হাত তোলেন। পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ মসজিদে ইদের নামাজ হয় সকাল ৭টায়।
আষাঢ়ের শেষ সময়ে এবারের কোরবানি ইদের দিন ঢাকায় ভারি বর্ষণের শঙ্কা নেই বলে আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। ইদের সকালে ঢাকার আকাশে ছিল রৌদ্রময় হাসি। যে কারণে ভ্যাপসা গরম। নামাজ শেষে রাজধানীবাসী ব্যস্ত হয়ে পড়েন পশু কোরবানি নিয়ে।
পরিবেশ দূষণ এড়াতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আগে পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করে দিলেও এবার সে ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বরাবরের মতই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা যায়।
দুই সিটি করপোরেশনের ধারণা ছিল, এবার ঈদে ঢাকায় ১২ লাখের বেশি পশু জবাই হবে। জবাই করা পশু এবং কোরবানির হাট মিলিয়ে বর্জ্য তৈরি হবে ২২ হাজার মেট্রিক টনের মত। কোরবানির পর বর্জ্য সিটি করপোরেশন থেকে সরবরাহ করা ব্যাগে ভরে বাড়ির সামনে রেখে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেখান থেকে করপোরেশনের কর্মীরা এসব ব্যাগ সরিয়ে নেবেন। কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থান পরিচ্ছন্ন করতে ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন ব্যবহার করবেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন। আর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে দক্ষিণ সিটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন (০২২২৩৩৮৬০১৪ ও ০১৭০৯৯০০৮৮৮) করতে অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা (২ ও ৬ অঞ্চল) সোয়ে মেন জো সারাবাংলা’কে বলেন, আমার অন্তর্গত এলাকার সকল গরুর হাটের ময়লা অপসারণের কাজ প্রায় শেষ। দুপুর পর্যন্ত দুই তিনটি হাটের কিছু কাজ বাকি ছিল। সেগুলো আমরা শেষ পর্যায়ে করে ফেলেছি।তারপরও কিছু কিছু পকেটে ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে, এখন আমরা সেগুলোর দিকে নজর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার এলাকার আওতায় কোরবানির ময়লা বর্জ্য অপসারণ এর অবস্থা সন্তোষজনক। আমরা গত রাত এগারোটা থেকে কোরবানির হাটের কোরবানির হাটগুলোর বজ্র অপসারণ করেছি। আজ দুপুর দুইটা থেকে এখন পর্যন্ত কোরবানির বর্জ্য অপসারণের অবস্থা খুবই সন্তোষজনক। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ময়লা অপসারণের কাজ শেষ করতে পারব, বলে আশা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আগে কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করা দেওয়া হত। কিন্তু মানুষ সেগুলোতে আগ্রহ দেখাত না। তবে এবার যেহেতু কোরবানির জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল না, মানুষ নিজেদের জায়গায় কোরবানি দিয়ে নিজেরাই ময়লা অপসারণের ব্যাপারে সচেতন আছেন। তাই আমাদের কাজে খুব একটা বেগ পোহাতে হচ্ছে না।
নিজে যেহেতু মনিটরিং করেছি, এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছি। আমার জোনের আওতায় দশটি ওয়ার্ডের মধ্যে একটির বর্জ্য অপসারণ সম্পূর্ণভাবে করা হয়েছে। বাকিগুলোও রাত ৭/৮টার মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
সেনাবাহিনী সহায়ক পক্ষ থেকে আমরা ২৫৩টি ভারী যন্ত্রপাতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্নতার কাজই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান আঞ্চলিক কর্মকর্তা সুয়েমেন জো।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর ঢাকা দক্ষিণে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত থাকবেন ৯ হাজার ৫০ জন কর্মী। এ কাজে ব্যবহার করা হবে ৩৫৩টি গাড়ি। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরে দায়িত্ব পালন করবেন ৯ হাজার ৯৯০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং গাড়ি থাকবে ৫৮৫টি।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম