Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মোড়ে মোড়ে কোরবানির মাংসের জমজমাট হাট

কবীর আলমগীর, জয়েন্ট নিউজ এডিটর
১০ জুলাই ২০২২ ২২:০০

ঢাকা: বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংস বিক্রির জন্য রাজধানীর মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ক্ষণস্থায়ী বাজার। ইদের দিন দুপুর থেকে এ সব বাজারে মাংস বিক্রি করছেন প্রান্তিক মানুষ। সহনশীল দামে তা কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন সীমিত সাধ্যের ভোক্তারা। রাজধানীর এ সব বাজারে রকমভেদে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।

রোববার (১০ জুলাই) সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, মালিবাগ, খিলগাঁও রেলগেট, মিরপুর ১, ১০ নম্বর, ফার্মগেট খামারবাড়ি, পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় এ বাজার দেখা যায়।

মাংসের হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— সাধারণ মানুষ কম দামে এ সব স্থান থেকে মাংস কেনেন। বিশেষ করে যেসব স্বল্প আয়ের লোকজন সামর্থ্যের অভাবে কোরবানি দিতে পারেননি। মূলত তারাই অস্থায়ী বাজার থেকে কোরবানির মাংস ক্রয় করে থাকেন।

কোরবানির মাংসের একটি নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে থাকেন সমাজের দুস্থ-অসহায় মানুষেরা। সেই মাংস থেকে কেউবা প্রয়োজনমতো রেখে দিচ্ছেন খাবারের জন্য, বাড়তি যে মাংস তা কেউ কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন আর্থিক জোগানের আশায়। কোরবানির দিনে কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে পাওয়া এ সব মাংস নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে  বসে মাংসের হাট।

ঈদের দিন দুপুর থেকে এসব হাটে বেচাকেনা শুরু হয়ে চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রধানত নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে এসব হাটে বিক্রি করেন। যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তারাই মূলত এ সব মাংসের ক্রেতা।

রোববার (১০ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে দেখা গেছে— মাংস কেনাবেচার বিরাট জটলা। দেখা যায় বিভিন্ন লোকজন ভ্যান গাড়িতে করে ও পলিথিন বিছিয়ে মাংস বিক্রি করছেন। এ সব মাংস তারা আশেপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে কিংবা কসাইগিরির মাধ্যমে পেয়েছেন। মাংসগুলো বিক্রি করার জন্য তারা ফুটপাতে বসেছেন।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর থেকে আসা মৌসুমি কসাই আবদুল মালেক বলেন, ‘গরু বানানোর কাজ শেষে উপহার হিসেবে মাংস যতটুকু পেয়েছি। সেগুলো শিয়া মসজিদ মোড়ে বিক্রি করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে মাংস বিক্রিতে ভালোই উপার্জন হয়।’

নবোদয় আবাসিক এলাকা থেকে মাংস কিনতে আসা এক নারী বলেন, ‘সবাই তো কোরবানি দিতে পারে না। তাই মাংসের চাহিদা মেটাতে এ সব বাজার আমাদের মতো মানুষের ভরসা। এখানে তুলনামূলক কম দামে মাংস পাওয়া যায়।’

রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট, মিরপুর ১, ১০ নম্বর, ফার্মগেট খামারবাড়ি, পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকাতেও বেচা বিক্রি হচ্ছে মাংস।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মাংস কেনাবেচার জন্য বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাংস নিয়ে এসব দোকানে আসছেন বিক্রেতারা। আবার বিভিন্ন দিক থেকে ক্রেতারা এসে এ সব দোকান থেকে মাংস কিনেও নিচ্ছেন। কেউবা ওজন করে মাংস বিক্রি করছেন আবার কেউ বা আন্দাজ-অনুমানে মাংসের পরিমাণ নির্ধারণ করে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকা এবং মালিবাগ ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পলিথিন কিংবা হোগলার চাটাই বিছিয়ে এ সব মাংস বিক্রি চলছে। এখানে গরুর মাথা ও পায়ের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে।

বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে সাধারণত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস বিতরণ করা হয় না। বরং যাদের পক্ষে সম্ভব হয় তারাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস চেয়ে নেন। এদের মাঝে যাদের শারীরিক সামর্থ্য আছে তারা কয়েকটি এলাকা ঘুরে মাংস সংগ্রহ করতে পারেন।

ফার্মগেটে খামারবাড়ি এলাকায় কথা হয় ৫০ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে। তিনি ও তার পরিবার সদস্যরা ৭ কেজি মাংস সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে। এই মাংসগুলো তিনি ৩২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার বিএসইসি ভবনের বিপরীত পাশের ফুটপাতে মাংস বিক্রি করছেন খোদেজা আক্তার।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি মানুষের বাসায় কাজ করি। ঈদের দিন আমার তিন সন্তান এবং আমার স্বামী মিলে মাংস সংগ্রহ করতে বের হই। পাঁচজন সারাদিন ঘুরে ১২ কেজির মতো মাংস পেয়েছি। মাংসগুলো বিক্রি করে ফেলেছি।’

তিনি বলেন, ‘এত মাংস তো খেতে পারব না। বাসার জন্য অল্প মাংস রেখে বাকিগুলো বিক্রি করতে এলাম।’

সরেজমিনে দেখা যায়— রাজধানীর বাংলামটর, হাতিরপুল, মৌচাক, রামপুরাসহ বিভিন্ন মোড়েও বসেছে কম দামে মাংসের বাজার। শুধু সীমিত সামর্থে্যর মানুষেরা নয়, এখান থেকে মাংস কিনছেন বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের একজন হোটেল ব্যবসায়ী মো. সগীর বলেন, ‘কাল-পরশু থেকে হোটেলে কাস্টমার আসা শুরু করবে। বিভিন্ন টিকা-কাবাব, মাংসের ঝাল ফ্রাই এমনকি হালিম তৈরিতে এ সব মাংস দরকার পড়বে। তাই কম দামে মাংস নিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি বছর কিনি। এখানে বিভিন্ন রকমের মাংস পাওয়া যায়। দামও বেশ সহনশীল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হোটেল ম্যানেজার বলেন, ‘দামে কম হওয়ায় এ সব মাংস লাভজনক। ক্রেতারা মাংস কিনে খুশি, বিক্রেতারাও লাভে মাংস বিক্রি করতে পারছেন। একটু যাচাই-বাছাই করলে এ সব বাজার থেকে কম দামে বেশ ভালো মাংস কেনা যায়।’

সারাবাংলা/একে

কোরবানি পশু কোরবানি মাংসের বাজার মাংসের হাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর