শ্রীলংকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হচ্ছেন কে?
১১ জুলাই ২০২২ ১১:৩৭
শ্রীলংকায় গত শনিবারের গণঅভ্যুত্থানের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এ পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দলগুলো। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হলে সেই সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
এর আগে, গত শনিবার (১০ জুলাই) দেশটির রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ায় বিক্ষোভ করেন দেশটির জনগণ। ফলে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শ্রীলংকার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হবেন প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্টে ভোট দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না করা পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
তবে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে— দু’জনেরই পদত্যাগ দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা। এক্ষেত্রে সংবিধান মতে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হবেন পার্লামেন্টের স্পিকার।
এমনটা হলে শ্রীলংকার বর্তমান স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্দেনা হবেন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। আর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য দেশটির জাতীয় নির্বাচন হওয়া জরুরি। আর সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরে নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই (এমপি) তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।
দেশটির বিরোধী দলগুলোর দাবির মুখে আগামী বুধবার (১৩ জুলাই) পদত্যাগ করবেন বলে গত শনিবার সংসদের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্দেনাকে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে’ও নিজের পদত্যাগ করার কথা জানিয়েছেন।
এর আগে, গত মে’তে সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, তিনি প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই। এলটিটিই’র বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জয়লাভের জন্য শ্রীলংকার অনেকের কাছে নায়ক হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন দুই ভাই। তবে সময়ের ব্যবধানে দেশটির চরম অর্থনৈতিক সংকটের জন্য এখন তোদের দায়ী করা হচ্ছে।
গত মে’তে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকস। আর আগামী বুধবার জনগণের কাঙ্ক্ষিত পদত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। এর মধ্যে দিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি পরিবারের পতন ঘটতে যাচ্ছে। যে পরিবারটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শ্রীলংকার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
বিগত সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারপ অর্থনৈতিক সময় পার করেছে ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলংকা। বৈদেশিক মূদ্রার তীব্র সংকটের কারণে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
একই কারণে নিজেদের বৈদেশিক ঋণ খেলাপি ঘোষণা করেছে শ্রীলংকা। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করার কথা। এই ঋণের চলতি বছরের কিস্তি স্থগিত করেছে দেশটি, যা প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি থেকে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন নিউজরুম এডিটর নূর সুমন।
সারাবাংলা/এনএস