‘গ্রামবাংলার কোরবানি মানেই বাড়তি আনন্দ’
১১ জুলাই ২০২২ ২০:৪৫
কক্সবাজার: পরিবারের সঙ্গে ইদ পালনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে শহর থেকে গ্রামে আসার আনন্দটাই অন্যরকম। দীর্ঘদিন পর মা-বাবা, ভাই-বোন আত্মীয় স্বজন ও পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুশির শেষ থাকে না। রাতেও গ্রামের বাজারগুলো জেগে থাকে পুরনো বন্ধুদের আড্ডায়। গল্পের বড় এক অংশজুড়ে থাকে নানা স্মৃতিচারণ ও কোরবানি পশু প্রসঙ্গে।
ইদের আগের দিন মাগরিবের নামাজ শেষে গ্রামের মসজিদগুলোতে মাইকিং চলে ঈদ শুভেচ্ছা ও নামাজ আদায় হবে। ওই দিন রাতে চাউল-ময়দার রুটি বানিয়ে আগাম কাজ সেরে নেয় ঘরের নারীরা। ইদের দিন সকালে পুকুরে ঝাঁপিয়ে আনন্দের সঙ্গে গোসল করা হয়। যা শহরে দেখা যায় না। ইদ নামাজের পর স্বজনদের কবর জিয়ারত শেষ হতে না হতেই কোরবানি পশুর গলায় ছুরি দেওয়া হয়। ওই সময় সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে মসজিদের হুজুররা। তাদের নিয়ে রীতিমতো টানাটানি শুরু হয় কার আগে কে পশু জবাই করবে। হুজুরও ৭ ভাগের নাম বলাসহ ছোটখাটো ধর্মীয় নিয়ম শেষে পশু জবাই করে।
কোরবানির পশু যখন মাঠ, বিল, নদীর পাড় অথবা ঘরের উঠানে জবাই করা হয় তখন প্রতিবেশীরাও কাজে হাত লাগায়। কোরবানির পশু ফেলা থেকে শুরু করে জবাই এবং মাংসা কাটকুটি করা পর্যন্ত থাকে একে অন্যের প্রতি সহযোগিতা।
কোরবানির দিন সাধারণত কসাইদের চাহিদা বেশি থাকায় নিজেরা নিজেদের পশু কাটাছেঁড়া ও বণ্টন করে থাকে। যারা কোরবান করেনি অথবা কম সামর্থ্য তাদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় বন্টনের মাংস।
এরইমধ্যে বিভিন্ন মক্তব-মাদরাসা ও নব্য চামড়া ব্যবসায়ীরা উপস্থিত হয় পশুর চামড়ার জন্য। কসাই না পাওয়ায় দীর্ঘ সময় চলে মাংস কোটার কাজ। এর মধ্যে ঘরের নারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন মাংসের মসলা তৈরি ও রুটি বানাতে। অনেকটা প্রতিযোগিতা শুরু হয় কার আগে কে ঘরে মাংস তুলবে। একইভাবে রান্নার ক্ষেত্রেও। কারো ঘরে রান্না আগে হয়ে গেলে অন্যরা ওই ঘরে দাওয়াত খায়। এই কাজটি বেশি করে আড্ডা প্রিয় তরুণরা। এরপর চলে ঘরে ঘরে মাংস খাওয়ার ধুম।
ভাতের চেয়ে রুটির চাহিদা বেশি। মাঝরাত পর্যন্ত এক ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে দাওয়াত আর আড্ডা। গ্রামের ইদ সহজে এক-দুই দিনে শেষ হয় না। ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্ট তো থাকেই। এছাড়া বিভিন্ন স্কুলে চলে পূনর্মিলনী।
পরে আস্তে আস্তে ইদের আমেজ কমতে থাকে। মাংসের প্রতি অনীহায় পুকুরে জাল ফেলা হয়। যে যার কর্মস্থলে ফিরে যায়। সঙ্গে নিয়ে যায় কোরবানি মাংস।
ফলে কোরবানিতে শহরের তুলনায় গ্রামের আনন্দ বেশি, জানান কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিনার হোসেন ও একই এলাকার বাসিন্দা ছুটিতে আসা র্যাব-১৭ ’তে কর্মরত আলি আজগর।
পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলবি বদিউল আলম জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানি সবক্ষেত্রে একই রকম। তবে পরিবার নিয়ে ইদ করাতে একটি বাড়তি আনন্দ। তাই হয়ত গ্রামের ইদে আনন্দটা বাড়তি।
সারাবাংলা/এমও