Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষের পথে, নিরাপত্তা পরিকল্পনা কতদূর?

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জুলাই ২০২২ ০৮:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। চলতি বছরের শেষনাগাদ খুলতে পারে টানেলের দুয়ার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। কিন্তু চালুর পর টানেলকে কেন্দ্র করে যে বিশাল আকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর আশা করা হচ্ছে, সেটি সামলানোর জন্য নিরাপত্তা দেওয়ার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ কতটুকু এগিয়েছে, এখন সেই প্রশ্ন সামনে আসছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে টানেলের দুই প্রান্তে দু’টি থানা ও একটি পুলিশ লাইন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব এখনও চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। টানেল উদ্বোধনের আগে এসব প্রস্তাব আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশ কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে তারা এ-ও বলছেন, নতুন স্থাপনা ও জনবল না বাড়িয়ে বিদ্যমান কাঠামো দিয়ে টানেলকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলানো এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা কষ্টসাধ্য হবে।

কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদীর তলদেশের টানেলের দুটি টিউব নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। টানেলের ভেতরে অবকাঠামোগত কাজ চলছে। মূল টানেল এবং সংযুক্ত সড়ক তৈরিসহ সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী— ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

এ অবস্থায় দেশের নদীপথের প্রথম টানেলকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে আছে- কর্ণফুলী থানা এলাকায় নতুন একটি পুলিশ লাইন স্থাপন এবং টানেলের দুই প্রান্তে নতুন দুই থানা।

বর্তমানে দামপাড়া ও মনসুরাবাদ এলাকায় সিএমপির দুইটি পুলিশ লাইন আছে। তৃতীয় পুলিশ লাইনটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে কর্ণফুলী উপজেলার সিইউএফএল সংলগ্ন খাস জমিতে ২৫ একর জায়গায়। প্রস্তাবিত স্থানে তৃতীয় পুলিশ লাইনে সাতটি স্থাপনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যারাকের পাশাপাশি সেখানে থাকবে পরিবহন ডাম্পিং স্টেশন, ওয়ার্কশপ, ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জোনাল এসি অফিস (জোনের সহকারী কমিশনার কার্যালয়), বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং বন্দর জোনের উপ-কমিশনার কার্যালয়।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পুলিশ লাইন স্থাপনের প্রস্তাবটি বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরে আছে। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদনের পর সেটা ভূমি মন্ত্রণালয়ে যাবে। ভূমি বরাদ্দ পাবার পর আরও দাফতরিক প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে থানার সংখ্যা ১৬টি। সিএমপি আরও চারটি থানা করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী টানেলের দুই প্রান্তে হবে দুই থানা- বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ব ও পশ্চিম থানা। বাকি দু’টি হচ্ছে-কাট্টলী থানা ও মোহরা থানা।

টানেলের পূর্ব প্রান্ত অর্থাৎ আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারাশাত, রায়পুর ও বড় উঠান ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ব থানা। আর নগরীর অংশে সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল পশ্চিম থানা।

সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে কাট্টলী থানা করার প্রস্তাব দিয়েছে সিএমপি। আর ৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে মোহরা থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মো. তানভীর বলেন, ‘বিদ্যমান কয়েকটি থানার কিছু এলাকা এবং জেলা থেকে আরও কয়েকটি এলাকাকে যুক্ত করে চারটি নতুন থানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশ সদর দফতর থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গেছে। উপজেলা থেকে যেসব এলাকাকে সিএমপির সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গণশুনানির পর্যায়ে আছে।’

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত আছে। এই টানেল কর্ণফুলী-আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে চট্টগ্রাম শহরকে।

সিএমপি কমিশনার তানভীর বলেন, ‘টানেল হয়ে গেলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। যে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে সেগুলোর নিরাপত্তা এবং টানেল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনেক ফোর্সের প্রয়োজন হবে। দামপাড়া কিংবা মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন থেকে সেখানে ফোর্স নেওয়া সহজসাধ্য নয়। সে জন্য টানেল এলাকাতেই একটি পুলিশ লাইন নির্মাণ দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া টানেলের দুই প্রান্তের দুই থানাসহ চারটি থানার অনুমোদনও দ্রুততার সঙ্গে পেলে ভালো হবে।’

প্রস্তাবনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত সিএমপি একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কয়েকদিন যে ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছিল, সেই বাস্তবতা বিবেচনায় টানেল উদ্বোধনের আগেই নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু যে গতিতে সিএমপির প্রস্তাবনাগুলো আগাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আরও সময় লাগবে। এর মধ্যে টানেলের কাজ শেষ হয়ে যাবে। অথচ টানেল এলাকায় থানা ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এ সব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।’

টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘টানেলের নিরাপত্তার জন্য স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি আমাদের ম্যানুয়েলের মধ্যেই আছে। আমরা এখন মেইটেন্যান্স পিরিয়ড পার করছি। যখন যেটি আমাদের দরকার হবে, সেটি অবশ্যই করা হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

কর্ণফুলী নদী টানেল নির্মাণ বঙ্গবন্ধু টানেল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর