Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্ধ শিশুপার্ক-জাদুঘর, দর্শনার্থীদের ভিড় চিড়িয়াখানায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ জুলাই ২০২২ ২১:২৫

ঢাকা: মানুষে ঠাসা রাজধানী ঢাকায় চিত্ত বিনোদনের সুযোগ কম। যে ব্যবস্থা রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। তার ওপরে ইদের সময়ে এসবের অধিকাংশ থাকছে বন্ধ। তাই ইদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের চাপ দেখা গেলো জাতীয় চিড়িয়াখানায়। তবে গত রোজার ইদের তুলনায় সে সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ কম। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোরবানির ইদে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হয়। তবে তাদের আয়োজন বরাবরের মতোই।

এদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, ইদে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় কম সময়েই চিড়িয়াখানায় পৌঁছানো গেছে। ফলে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।

বিজ্ঞাপন

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই বছর উৎসবমুখর পরিবেশে ইদ উদযাপন করতে পারেনি কেউ। এবার সংক্রমণ কমার পাশাপাশি বিধিনিষেধ না থাকায় বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে ইদে। কিন্তু শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর, লালবাগ কেল্লার মতো দর্শনীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ ছুটছে চিড়িয়াখানার দিকে।

সোমবার ( ১১ জুলাই) মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা গিয়ে দেখা গেলো অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রগুলোর চেয়ে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি।

টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে চিড়িয়াখানার মূল প্রবেশদ্বার পার হতেই ডান দিকে হরিণ। হরিণ দেখার জন্য দর্শনার্থীদের জায়গা ছিলো ছোট বড় মানুষে পরিপূর্ণ। তার আরেকটু সামনে বানরের খাঁচার সামনে বড়দের চেয়ে ছোট দর্শনার্থীর সংখ্যাই চোখে পড়েছে বেশী।

পরিবার পরিজন নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসা মিল্লাত রহমান জানান, রাজধানীর শেওয়াপাড়া থেকে এসেছেন। বাসার কাছাকাছি থাকা সত্তেও ব্যস্ততার কারণে বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসা হয়নি। এবার এখানে এসে বাচ্চারা ভীষণ খুশি বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মুসলিম দর্শনার্থীদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষেরও সংখ্যা কম ছিলো না। অনামিকা কর্মকার জানান, মোহাম্মদপুর থেকে তিনি এসেছেন স্বামী সন্তানের সঙ্গে। ইদের সময়ে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ঘুরতে বেড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।

ইদকে ঘিরে একসঙ্গে এতো মানুষ একসঙ্গে দেখতে পেয়ে অনেকটা বিব্রত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বনের রাজা সিংহও। প্রাণিদের প্রতিটা খাঁচার সামনেই ছিলো দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ছিলো ইমু পাখি, উট পাখি, সুন্দরী ময়ূর, কোকিল, বকদের খাঁচার সামনেও। সবচেয়ে ভিড় দেখা গেছে জিরাফ, জেব্রা, ঘোড়া, বুনো মহিষ, সাদা ঘোড়া, গন্ডারদের খাঁচার সামনে।

এবার চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ আফ্রিকান সিংহ, পেলিক্যান, ক্যাঙ্গারু, ওয়াইল্ড বিস্ট, লামা। সম্প্রতি আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ড থেকে পাঁচ প্রজাতির এমন ১৬টি প্রাণি আনা হয়েছে। প্রাণিগুলো পর্যবেক্ষণ শেষে এরইমধ্যে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ ছিলো সেখানে।

১৮৬ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েছে ১৩৭টি খাঁচা। সবগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই বিশ্রাম নিচ্ছে চিড়িয়াখানার মাঠে থাকা ঘাঁসের ওপরে। আবার কেউ মুখে পানি ছিটিয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছেন।

জাতীয় চিড়িয়াখানায় খাঁচাবন্দি পশুপাখি ছাড়াও রয়েছে শিশুদের জন্য একটি ছোট পার্ক। সেখানে রয়েছে স্লিপার, নাগরদোলা, রেলগাড়ি। টিকিট কেটে বাচ্চাদের এসব রাইডে তুলে দেওয়ার ভিড় লেগেছিলো প্রায় সারাদিন। অন্যদিকে, ভিড় ছিলো চিড়িখানার ভেতরে থাকা প্রাণি জাদুঘরে। লাইন ধরে দশ টাকা টিকিট কেটে ভেতরে ঘুরে দেখছেন জাদুঘর।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, শোনা যায় অনেক বিনোদন কেন্দ্রে চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু জাতীয় চিড়িয়াখানায় এতো লোকের সমাগম হয়ে থাকে তারপরেও এমন ঘটনা আমাদের কানে আসেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা দর্শনার্থীদের যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করি। নিজস্ব সিকিউরিটির পাশাপাশি পুলিশদের টহল বাড়ানো হয় এসময়। তাছাড়া আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি টিম কাজ করছে। লোকবল কম থাকায় আমরা কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে দিয়েছি। দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে দেখতে পারে সেজন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে পানির ব্যবস্থা রেখেছি। বসার ব্যবস্থা আছে। আমরা চেষ্টা করেছি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যাতে সকলে তৃপ্তি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারে।’

তবে গত রোজার ইদের চেয়ে এবার দর্শনার্থী সংখ্যা কমপক্ষে ১ লাখ লোক কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোরবানির লোকজন একটু কম হয়। এবার ইদের দ্বিতীয় দিনে ধারনা করা হচ্ছে ৫০ হাজার দর্শনার্থী হয়েছে। রোজার ইদে একই দিনে দেড় লাখ দর্শনার্থী হয়েছিলো জাতীয় চিড়িয়াখানায়।’

জাতীয় চিড়িয়াখানা ছাড়াও রাজধানীতে আরও আছে জাতীয় জাদুঘর, ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডস বা শিশু মেলা, হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরেও মানুষ বেড়াতে যায়। আর ঢাকা থেকে একটু দূরে আশুলিয়ায় আছে ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক। ইদের ছুটিতে এসকল বিনোদন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। ইদের প্রথম দিনে এসব বিনোদন কেন্দ্রে লোক সমাগম কিছুটা কম হলেও দ্বিতীয় দিনে বেশ বাড়তি ছিলো।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

চিড়িয়াখানা জাদুঘর দর্শনার্থী শিশুপার্ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর