Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফাঁকা ঢাকায় ৪০ মিনিটে মিরপুর থেকে সদরঘাট

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ জুলাই ২০২২ ২১:৪৭

ঢাকা: ইদের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর মিরপুর ১১ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে চল্লিশ মিনিটে সদরঘাট পৌঁছান সোহাগ মিয়া। সপ্তাহের অন্যান্য দিন প্রায় ২০ কিলোমিটারের এই রাস্তা পেরোতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু সোমবার (১১ জুলাই) ইদুল আজহার পরদিন ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে অবাধে যানজটমুক্তভাবে চলাচল করছেন পনেরো বছর ধরে ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালানো সোহাগ মিয়া।

গুগল ম্যাপ অনুযায়ী মিরপুর থেকে সদরঘাটের দূরত্ব রোকেয়া সরণি দিয়ে ধরলে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার আর মিরপুর রোড দিয়ে ধরলে ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ইদুল আজহার ছুটিতে রাজধানী বেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় রাস্তা পার হতে সময় লেগেছে ৪০ মিনিট। রাজধানী ঢাকার কোরবানি ইদের দ্বিতীয় দিনের সার্বিক চিত্রই এটি। রাজধানী ঘুরে ও ঢাকার রাস্তার বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ, সিনএনজি অটোরিকশাচালক, রিকশাচালক, বাসের হেলপার, যাত্রী, কর্মজীবীসহ সোমবার ঢাকায় বের হওয়া বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্রই দেখা গেল।

মৎস্যভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, বাংলা মোটর, সোনারগাঁ সিগন্যাল, পান্থপথ, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার সব সিগন্যালেই নির্বিঘ্নে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। দেখা গেল প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশার আধিক্য। কিছু মোটরসাইকেলও চলছে। আর রয়েছে অল্পকিছু বাস।

আশুলিয়া থেকে কদমতলী রুটে চলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ নামের বাস। বাসে হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী। শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্তে যাত্রী খুঁজছিলেন হেলপার মোহাম্মদ আনোয়ার। যাত্রী না পাওয়ায় হতাশার কথা জানালেন তিনি। এমনকি অনেকেই নাকি ইদের সময়েও ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত অর্ধেক ভাড়া দিতে চাচ্ছে বলেও জানালেন। বখশিশ চাইলে অনেকেই নাকি মারতেও চাইছে। সবমিলিয়ে ফাঁকা রাস্তায় আরামে চলাচল করতে পারলেও যাত্রী না থাকায় আশানুরূপ আয় করতে পারছে না তাদের বাস।

রাজধানী ঢাকার কয়েকটি ব্যস্ত ট্রাফিক সিগন্যালের মধ্যে অন্যতম মৎস্যভবন, শাহবাগ মোড়, ফার্মগেট ও বিজয় সরণি। সবকটি সিগন্যালেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ জানালেন সকাল থেকে যানবাহনের চাপ ছিলই না বলতে গেলে। দুপুরের পর থেকে কিছুটা বেড়েছে। আজ ইদের দ্বিতীয় দিন প্রাইভেট কারই বেশি চলছে। এ ছাড়াও অল্প দুয়েকটা পাবলিক বাসও চলতে শুরু করেছে। যানবাহনের পরিমাণ কম থাকায় তাদের ট্রাফিক সামলাতে তেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে না। কয়েকজন একটু গতি বাড়ালেও সবাই মোটামুটি সিগন্যাল মেনেই চলাচল করছেন বলে জানালেন তারা।

মৎস্যভবন মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক রমনা বিভাগের কনস্টেবল এ আর খান। জানালেন গতকাল থেকেই রাস্তা প্রায় ফাঁকা। অত্যন্ত নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত রমনা ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মং মং বাতেন বলেন, বিকেল পর্যন্ত গাড়ির চাপ কম থাকলেও সন্ধ্যা নাগাদ এটি কিছুটা বেড়ে যাবে। ইদের দিন তেমন একটা না বের হলেও দ্বিতীয় দিন অনেকেই ঘুরতে বের হচ্ছেন।

এদিকে ফার্মগেট মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক তেজগাঁ বিভাগের কনস্টেবল মোহাম্মদ বাবুল মিয়া জানালেন বিকেলের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়ছে। তবে যানবাহনগুলো মোটামুটি ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলায় তারা অতটা চাপ অনুভব করছেন না। তা ছাড়া ইদের দ্বিতীয় দিন দেখে এই রাস্তায় রিকশা চলাচলেও কোন বাধা দিচ্ছেন না তারা।

শাহবাগ মোড়ে বারডেম হাসপাতাল প্রান্তে রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদ রায়হান আলী। কমপক্ষে পনেরো বছর ধরে শাহবাগ এলাকায় রিকশা চালান। আজ ইদুল আজহার পরদিন যাত্রীই পাচ্ছেন না তিনি। ফাঁকা রাস্তায় ইচ্ছামতো গুলিস্তান, মহাখালি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট ছুটে বেড়াতে পারলেও মানুষ কম থাকায় আশানুরূপ আয় করতে না পারার কথা জানান তিনি। তবে ব্রেক না চেপে রিকশা চালাতে পেরে দারুণ ভালো লাগছে তার।

রিকশাচালক রায়হান মিয়ার মতই একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ভাড়ায় মোটসাইকেল চালক মোহাম্মদ আসাদ। আজ যাত্রী তেমন পাচ্ছেনই না। চাকরির পাশাপাশি অ্যাপস এবং ভাড়ায় দুইভাবেই যাত্রী পরিবহন করেন তিনি। যদিও মুগদা-খিলগাঁও এলাকাকে কেন্দ্র করে তার চলাচল তবে প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেতে হয় তাকে। সোমবার বিকেলে আসাদের সঙ্গে কথা হয় শাহবাগ মোড়ে। যাত্রীর খোঁজে আরও কয়েকজন মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। জানালেন আজ যমুনা ফিউচার পার্ক, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় গেছেন। রাজধানী ফাঁকা থাকায় নির্বিঘ্নে ও দ্রুত চলাচল করতে পেরেছেন তিনি। তবে রাস্তা ফাঁকা থাকায় মোটরসাইকেল চালিয়ে আনন্দ পেলেও কিছুটা ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছেন। রাস্তা ফাঁকা থাকলে কিছু মানুষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে যানবাহন চালায় তাই তাকে সাবধানেই চালাতে হচ্ছে।

বিকেলে মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটি থেকে সেগুনবাগিচার কর্মস্থলে আসেন খোকন। ইদে অফিসের ডিউটি নিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, আসার পথে পুরো রাস্তা ফাঁকা দেখেছেন। জরুরি জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া এলাকার দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় তেমন লোকজন বা গাড়িঘোড়াও নেই। ফলে অত্যন্ত ব্যস্ত ও যানজটে দুর্বিষহ এই রাস্তা পার হয়ে নির্বিঘ্নে অফিসে পৌঁছেছেন তিনি।

ইদুল আজহার দ্বিতীয় দিন রাজধানী ঢাকায় গাড়ির চাপ কম থাকায় নির্বিঘ্নেও চলাচল করতে পারছে মানুষ। আবার অতিরিক্ত ট্রাফিক সামলাতে হিমশিম খাওয়া ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও ফাঁকা ঢাকায় ছুটির আমেজে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করছেন।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

ইদের ছুুটি ফাঁকা ঢাকা মিরপুর রাজধানী সদরঘাট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর