নতুন গভর্নরের অগ্রাধিকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ বাড়ানো
১২ জুলাই ২০২২ ১৯:২৯
ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ। এ ছাড়াও এক্সচেঞ্জ রেটকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো হবে অগ্রাধিকারমূলক তিন কাজ।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি তিনটি অগ্রাধিকারের কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ। এক্সচেঞ্জ রেটকে নিয়ন্ত্রণে আনা দ্বিতীয় বড় দায়িত্ব এবং তৃতীয় হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বাড়ানো।’
এ ক্ষেত্রে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করবে বলেও তিনি জানান।
নতুন গভর্নর বলেন, ‘এখন মূল্যস্ফীতি যে পর্যায় এটি বাজারে অতিরিক্ত টাকার সরবরাহের কারণ আসেনি বরং আমদানি করা পণ্যর মূল্য বেশি সে কারণে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাপ উঠে গেলেই যে সুদের হার কমবে, তার কোনো মানে নেই। আরও কমতে পারে।’
নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। কেননা উচ্চ সুদ হারের কারণে খেলাপি বাড়ে। কম থাকলে খেলাপি বাড়ে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার মঙ্গলবার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবিরের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দেশের ১২তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আব্দুর রউফ তালুকদার ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই অর্থ-সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আসেন। তার আগে তিনি এই বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপ-সচিব ও যুগ্ম-সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া অর্থ বিভাগের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রউফ তালুকদার চাকরিজীবনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন, বিশেষ করে দেশের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির ওপর কর্মশালায় অংশ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেন।
পরে সেসব অভিজ্ঞতা নিজ দেশে কাজে লাগান। মহামারি করোনার সময় দেশের ক্রান্তিকালে অর্থনীতি চাঙা করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রউফ। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার পরামর্শ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেশ প্রশংসনীয়।
অর্থ বিভাগের বিভিন্ন পদ ছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিবের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে আব্দুর রউফ তালুকদারের। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব ছিলেন তিনি।
আব্দুর রউফ তালুকদার ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি ডিগ্রি নেন।
২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তখনকার গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। এর পরদিন ১৬ মার্চ সাবেক অর্থ-সচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। পরে ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে ১১তম গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন ফজলে কবির। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। যা ওই বছর ৩ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সারাবাংলা/জিএস/একে