Wednesday 23 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কলেজ অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২২ ১৩:০৫ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৪

রাজশাহী: রাজশাহীর একটি কলেজের অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ওমর ফারুক চৌধুরী তার ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেকে পরিকল্পিতভাবে কলেজ অধ্যক্ষকে পেটানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

আহত কলেজ অধ্যক্ষের নাম সেলিম রেজা। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুসি ও হকিস্টিকের আঘাতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। তবে মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত ওই শিক্ষক এখনো ভীতসন্ত্রস্ত্র। চিকিৎসা শেষে নগরীর নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন। এমপির হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হলেও লজ্জা ও আতঙ্কে কোথাও অভিযোগ করেননি বলে জানান সেলিম রেজা।

কলেজ অধ্যক্ষ সেলিম রেজা জানান, গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু ফোন করে উপজেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের এমপি ফারুকের ব্যক্তিগত চেম্বারে উপস্থিত হতে বলেন। সেদিন রাত ৯টায় নগরীর থিম ওমর প্লাজায় এমপির ব্যক্তিগত চেম্বারে আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপি ফারুকের চেম্বারে উপস্থিত হন।

এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এর পরপরই এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে এমপি ফারুক ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেলিম রেজাকে প্রথমেই তার বাম চোখের নিচে সজোরে ঘুষি মারেন। এরপর উপর্যুপরি চলতে থাকে কিল ঘুষি ও লাথি। এরপর হকিস্টিক বের করে বেশি কয়েকটি আঘাতও করেন এমপি। এতে অধ্যক্ষের বাম হাত, কোমর ও পায়ে মারাত্মক জখম হয়। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেপরোয়াভাবে পিটিয়ে জখম করেন। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ সেলিম প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন।

এ সময় অধ্যক্ষদের একজন সেলিম রেজাকে এমপির কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কয়েকজন স্বজন ও সহকর্মীর সহায়তায় তিনি বাড়িতে ফেরেন। ঘটনার পর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ক্ষোভে লজ্জায় বাসা থেকে আর বের হননি।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ৭ জুলাই রাতের ঘটনার পর তিনি বাড়িতেই থাকছেন। তবে সোমবার বিকালে এমপির ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল আমার বাসায় আসেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন। এ সময় এমপি সাহেব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এমপি সাহেব সময় করে আমাকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।

গোদাগাড়ীর আরেকটি কলেজের অধ্যক্ষ সে সময় উপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্য হয়ে কলেজ শিক্ষককে পিটিয়েছে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর হতে পারে না। আমরা ভাবতেই পারছি না। আমাদের মুখের ভাষাও হারিয়ে গেছে। একজন কলেজ অধ্যক্ষকে গরুপেটা করে পেটানো কী সাংঘাতিক ঘটনা। আমরা বিচার দেবো কার কাছে।

কলেজ অধ্যক্ষকে চেম্বারে ঢেকে মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা নিয়ে কলেজের অনেকে আমার সাথে দেখা করতে আসেন। কমিটি গঠন নিয়ে নিজেরা দ্বন্দ্ব থেকে মারামারি শুরু করেন। আমি গিয়ে তাদেরকে থামিয়েছি।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে হকিস্টিক দিয়ে কেন পিটিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওগুলো বানানো কথা। আমি সেলিম রেজার গায়ে হাত তুলিনি। শরীরে মারধরের চিহ্ন কীভাবে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না।

সারাবাংলা/এএম

টপ নিউজ রাজশাহী সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী