টাকার অভাবে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে টানাপোড়েন
১৩ জুলাই ২০২২ ২১:২০
ঢাকা: আগামীকাল বৃহস্পতিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২০ সালের ১৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দিবসটি পালন করার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি। এমনকি এরশাদের সমাধিস্থালে দলটির চেয়ারম্যান যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা।
দলের চেয়ারম্যান কেন যাচ্ছেন না সে সর্ম্পকে জানাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন শীর্ষ নেতা এবং দলীয় এমপি নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, এরশাদ মরে গেছেন, সে জন্য অনেকের ভাগ্য খুলেছে। তবে ক্ষতি হয়েছে দলটির। তিনি না মারা গেলে জি এম কাদের কোনোদিন দলের চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। কেননা এরশাদের জীবদ্দশায় জি এম কাদেরের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক ছিল না।
জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে স্মরণসভা দোয়া, মিলাদ মাহফিল, প্রার্থনা সভা, এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রংপর পল্লীনিবাসে এরশাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন জাপা নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ। এরইমধ্যে তিনি রংপুরে পৌছে গেছেন। তবে দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্রটি।
জি এম কাদেরকে কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুর যাওয়ার প্রস্তাব করলে তা তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘কে অ্যারেঞ্জমেন্ট করবে?’ কেন্দ্রীয়ভাবে কাঙালিভোজের আয়োজনের প্রশ্ন করা হলে তিনি টাকার অভাবে নাকচ করে দেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছে— গত মঙ্গলবার বিকেলে দিবসটি পালন করার লক্ষ্যে দলটির কাকরাইল অফিসে বৈঠকে ঢাকার এমপি ও জাপা কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা রংপুরে এরশাদের সমাধিতে যাওয়ার প্রস্তাব করলেও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু তাতে সায় দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য সারাদেশে দুই লাখ পোস্টার ছাপানোর প্রস্তাব করা হলেও অর্থের অভাবে তা ছাপাতে পারেনি। দল থেকে মাত্র ২০ হাজার পোস্টার ছাপিয়ে বিলি করা হয়েছে।
সূত্রটি বলেছে— সাদামাটাভাবে দিবসটি পালন করবে জাপা। সে জন্য আগামীকাল জাপা কাকরাইল মসজিদে এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে নেতাকর্মীরা। এরপর ১০ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কুলখানি, বিকেলে মিলাদ মাহফিল, তোবারক বিতরণ করবেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এ সব বিষয় নিয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে এবার কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা ও কোভিডের কারণে এই প্রোগ্রাম রাখা হয়নি। বন্যার সময় কাঙালিভোজের আয়োজন করা হলে সমাজে কথা উঠবে। তবে রংপুরে মেয়র এবং এমপি রাঙ্গাঁ সাহেব কাঙালিভোজের আয়োজন করবেন।’
অর্থের অভাবে কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়নি— উল্লেখ করলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘এ কথা ঠিক নয়।’
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি রংপুরে আছি। দিবসটি পালনের জন্য রংপুরের মেয়র নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হয়নি। একটি মিষ্টি, একটি সিঙ্গারা দিয়ে তোবারক বিতরণ করা হবে।’
দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা কেন যাচ্ছেন না? জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
অপরদিকে, বিকেলে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদ ট্রাস্ট স্মরণসভা করবে। মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা। দিনব্যাপি কোরান খতম, মিলাদ-মাহফিল এবং দুপুরে হাইকোর্ট মাজারে ১০০০ দুস্থদের মাঝে বিরিয়ানি বিতরণ করা হবে বলে বিদিশা জানান।
তিনি জানান, পরে কোনো এক সময় রংপুরে এরশাদের সমাধিস্থলে তিনি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন।
দলটির অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য তার নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, এরশাদ নেই বলে আজ জাতীয় পার্টি বিলুপ্তির পথে। এরশাদ সাহেব যাদের এমপি বানিয়েছেন তারাও আজ তাকে ভুলে যাচ্ছেন।
তার মতে— জাপা চেয়ারম্যানের উচিৎ ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে রংপুরে গিয়ে এরশাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে
জাতীয় পার্টি জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ