Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা নগর পরিবহন ‘নিখোঁজ’

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২২ ১৪:৪৫

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশন কমিটির আওতায় যাত্রা শুরু করে ঢাকা নগর পরিবহন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরুর পর থেকেই যাত্রীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই বাস সার্ভিস। অন্যান্য পরিবহন বাদ দিয়ে যাত্রীরা রীতিমতো লাইন ধরে অপেক্ষায় থাকতে শুরু করেন এই পরিবহনের জন্য। রুটের বাস বাড়বে, সঙ্গে বাড়বে রুট— এমন আশ্বাসে আস্থা রেখে যাত্রীরাও অপেক্ষায় ছিলেন নগরে পরিবহন খাতের সুদিনের।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীবাসীর সেই আশা অবশ্য স্থায়ী হয়নি বেশি দিন। অন্যান্য পরিবহনের মতোই সেবার মান কমতে থাকে নগর পরিবহনের। তারপরও নির্দিষ্ট ভাড়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানামার কারণে যাত্রীদের মধ্যে এখনো জনপ্রিয় এই সার্ভিস। কিন্তু ইদুল আজহার কয়েকদিন আগে থেকেই ‘উধাও’ এই নগর পরিবহন। ইদের পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও সড়কে এই কোম্পানির বাসের দেখা নেই। কাউন্টারে যাত্রীরা আগের মতোই অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছেন, কিন্তু দেখা নেই কাউন্টারম্যানের। বাসগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তেমন কিছু জানাতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

নগর পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইদুল আজহার ছুটি শুরুর দুই-তিন দিন আগেই বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা। ফাঁকা পড়ে আছে এই পরিবহনের জন্য নির্মিত নান্দনিক সব কাউন্টার। সেখানে যথারীতি যাত্রী আসছেন, অপেক্ষা করছেন, ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনোভাবেই দেখা দিচ্ছে না নগর পরিবহনের কোনো বাস। যাত্রীরা বলছেন, তারা পারলে নগর পরিবহনের বাসের জন্য ‘নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি’ টাঙিয়ে দিতেন!

এদিকে, দেখা না মিললেও প্রতিদিনই কাউন্টারে এসে অপেক্ষা করছেন নগর পরিবহনের বেশকিছু নিয়মিত যাত্রী। এর মধ্যে একজন শিক্ষক হাসিব বলেন, ‘এমন একটি পরিবহনসেবা বন্ধ, অথচ কোনো ধরনের কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রথমে আমরা ভেবেছি, এটি সরকারি বাস, তাই হয়তো ইদের ছুটিতে বন্ধ আছে। এখন ছুটি শেষে দুই-তিন কর্মদিবস চলে গেল। কিন্তু নগর পরিবহনের দেখা নেই।’

মোহাম্মদপুর কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক যাত্রী আনিস বলেন, আমাদের গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু নগর পরিবহনের দেখা নেই। ইদের জন্য যদি কয়েকদিন বন্ধ রাখা হয়, সেটি তো জানানো উচিত। কাউন্টারে একটি নোটিশ হলেও দিতে পারত। কিন্তু কোথাও কোনো আওয়াজ নেই। এখন তো দেখি নগর পরিবহনের নামে ‘নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি’ প্রচার করতে হবে!

যেকোনো অভিযোগ জানাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করার আহ্বান ছিল এই নগর পরিবহনের বাসগুলোর দেয়ালে। এজন্য বাসগুলোর খোঁজ নিতে শুরুতেই যোগাযোগ করা হয় ৯৯৯ নম্বরে। সেখান থেকে সারাবাংলা ডটনেটকে ঢাকা ট্রাফিক বিভাগের একটি নম্বর দেওয়া হয়। সেখানেই ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানতে বলা হয়।

সেই নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে। ঢাকা নগর পরিবহন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের সাফ জবাব, ‘এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।‘ শুধু তাই নয়, ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের কর্তব্যরত কর্মকর্তা বলেন, ‘৯৯৯ কিছুই জানে না। তারা অযথা আমাদের নম্বর দিয়েছে। এগুলো বলতে পারবে বাস কোম্পানি।’

ঢাকা নগর পরিবহন চালু নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রয়াস ছিল দীর্ঘ দিনের। দীর্ঘ কয়েক বছরের চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বরে এই সেবার উদ্বোধন করেন ঢাকার দুই মেয়র। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নগর পরিবহনের চলতি রুটে বাস বাড়বে। কিছুদিন আগে নতুন তিন রুটেও এই বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেন তিনি।

ইদুল আজহার আগে থেকেই ‘নিখোঁজ’ নগর পরিবহন বিষয়ে জানতে ডিএসসিসি মেয়র শেখ তাপসের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে পাওয়া যায়নি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকেও।

পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে দায়িত্বরত ব্যক্তিও কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। উল্টো তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমাদের আইডিয়া নেই এখন। আপাতত এটা বন্ধ কি না, জানি না। আপনার কাছ থেকেই জানলাম বন্ধ।’

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছেরের সঙ্গে। এ বিষয়ে কিছু জানা নেই তারও। আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই অ্যাক্টিভিটি যেখান থেকে দেখা হয় তারা হলো ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

ডিটিসিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেও অবশ্য সন্ধান পাওয়া যায়নি নগর পরিবহনের। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার কল রিসিভ না করে এসএমএসে যোগাযোগ করতে বলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নগর পরিবহনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে এসএমএস করলে আর উত্তর দেননি তিনি। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন।

একাধিক ‘কর্তৃপক্ষ’ কোনো তথ্য জানাতে না পারলেও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ হলে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘ইদের খ্যাপ’ দিতেই হয়তো ব্যস্ত নগর পরিবহনের বাসগুলো। ঢাকায় চলাচলকারী এসব বাস রিজার্ভ নিয়ে নিম্নবিত্ত অনেকেই ইদে বাড়ি ফেরেন। তাদের ঢাকায় ফেরার বাহনও এসব বাস। আগামী শনিবার পর্যন্ত ফিরতি ইদযাত্রার সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। সে পর্যন্ত নগর পরিবহন হয়তো ‘নিখোঁজ’ই থাকবে রাজধানীর নিয়মিত রুটে।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

ঢাকা নগর পরিবহন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর