Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রিজার্ভ চুরি: বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরসিবিসি’র মামলা খারিজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২২ ১৬:২৬

ঢাকা: আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) করা মানহানি মামলা খারিজ করে দিয়েছে ফিলিপাইনের আদালত। ৩০ জুন ফিলিপাইনের আদালত এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করে। রায়ের কপি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আরসিবিসি‘র মানহানি মামলা সেই দেশের আদালতে খারিজ করে দিয়েছে। আদালত বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে বিচারের আওতায় আনার এখতিয়ার ফিলিপাইনের আদালতের নেই।

তিনি আরও বলেন, নিউইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ আরসিবিসির বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল, তা চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকারা। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করতে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে বলা হয়, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর সিনিয়র কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। বাংলাদেশ মামলা করার পর একই বছরের ৬ মার্চ ফিলিপাইনের সিভিল কোর্টে আরসিবিসি পাল্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) দাবি করে আরসিবিসি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরসিবিসি‘র দায়ের করা ক্ষতিপূরণ মামলায় বলা হয়, টাকা আদায় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা আরসিবিসির সুনাম ক্ষুণ্ন এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু চুরি যাওয়া টাকা আরসিবিসির কাছে ছিল না, ওই টাকার দায়ও আরসিবিসির নয়। আরসিবিসি মামলা করার পর আইনি লড়াইয়ের জন্য ম্যানিলার ‘বারনাস ল অফিস’কে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ফিলিপাইনের আদালত আরসিবিসির পক্ষে রায় দিলে বাংলাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ জুন আরসিবিসির মানহানি মামলা খারিজ করে দেয় ফিলিপাইনের আদালত।

অন্যদিকে, চলতি বছরের এপ্রিলে আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে করা বাংলাদেশের মামলাও খারিজ হয়ে যায়। ওই সময় নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ওই মামলা বিচারের পর্যাপ্ত এখতিয়ার তাদের নেই। পরে বাংলাদেশ ব‌্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে নিউইয়র্কের এখতিয়ারভুক্ত আদালতে মামলা করা হয়েছে। যা চলমান আছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন- বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস। ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে পুরো প্রতিবেদন জমা দেন তারা। কিন্তু সেই প্রতিবেদন এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

সারাবাংলা/জিএস/একেএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর