Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্ত হলেন হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২২ ১৯:৪২

যশোর: অবশেষে যশোর শিক্ষা বোর্ডের আত্মস্বীকৃত অর্থ লোপাটকারী সাময়িক বরখাস্তকৃত সাবেক হিসাব সহকারী আব্দুস সালামকে চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করেছে শিক্ষাবোর্ড। বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বোর্ডের ওয়েবসাইটে এ চিঠি অফিস আদেশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট সাড়ে ৭ কোটি টাকার বিষয়ে প্রথম কারও বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত এবং শাস্তি হলো। এবার আব্দুস সালামের বাড়িও হাতছাড়া হতে পারে। আদালতের মাধ্যমে সেটি পেয়ে যেতে পারে শিক্ষা বোর্ড।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আব্দুস সালামের শাস্তি হওয়ায় বোর্ডের অনেকেই খুশি হলেও জড়িত অন্যরা শাস্তি না পাওয়ায় এবং এখনো দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) দেওয়া মামলার কার্যক্রম দৃশ্যমান না হওয়া নাখোশ তারা।

২০২১ সালের ৭ অক্টোবর প্রথমবারের মতো যশোর শিক্ষা বোর্ডের ধরা পড়ে ৯টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা লোপাটের ঘটনা। পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আরও ধরা পড়ায় মোট ৩৮টি চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে ১০ অক্টোবর এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তৎকালীন হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম বোর্ড কর্তৃপক্ষকে লিখিত দেন।

এছাড়া ওই মাসে দুই দফায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা ফেরত দেন। অবশিষ্ট টাকা ফেরত দিতে তিনি সময়ও প্রার্থনা করেন। তার আত্ম স্বীকৃতি ওটাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনায় একই মাসের ১০ তারিখে তাকে যশোর বোর্ড থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এসময় থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বোর্ডের এই অর্থ জালিয়াতির ঘটনাায় ওই মাসের ৯ তারিখে যশোরের দুদক একটি মামলা করে। তাতে তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন, বোর্ড সচিব প্রফেসর এএম এইচ আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের আশরাফুল ইসলাম বাবু ও মেসার্স শাহী লাল স্টোরের আশরাফুল ইসলাম মোট ৫ জনকে আসামি করা হয়।সে মামলার এখনো কোনো অগ্রগতি কেউ জানেনা বা এর তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে কিনা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কেউ বলতে পারে না।

যশোর বোর্ডের ৭ কোটি টাকা গায়েব, প্রতিবেদনে পার পাচ্ছেন জড়িতরা

এদিকে, আবুস সালাম যেহেতু নিজেই অপরাধ স্বীকার করে টাকা জমা দেন এবং তিনি বোর্ড কর্মচারী। ফলে শিক্ষা বোার্ড তার বিরুদ্ধে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে। তাকে একাধিকবার চিঠি ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে তার উত্তর যথাযথভাবে না পেয়ে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে তদন্ত বোর্ড গঠন করে। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর ৩(ঘ) এবং শিক্ষা বোর্ডেও চাকরি বিধি ১৯৯৭ এর ৩৫এর উপবিধি(ঙ)(২)(ক) অনুযায়ী চুরি, আত্মসাৎ ও তহবিল তছরুপ বা প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত হয়। তদন্ত বোর্ড সকল আইনগত বিধি অনুসরণ করে ইদুল আজহার আগে রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে আবউস সালামের অপরাধ সন্ধেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। অবশেষে তাকে ৭ কর্ম দিবসের সময় দিয়ে চূড়ান্ত কারণ দর্শানো নোটিশ দিলেও তার উত্তর না পেয়ে শিক্ষা বোর্ড বৃহস্পতিবার বোর্ডের ১৯৯৭ এর ৩৬ (২)(ছ) এবং সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮ এর ৪ (৩)(ঘ) মোতাাকে তাকে গুরু দ- দেয়। এ পেক্ষিতে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

আব্দুস সালামের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারা বোর্ডের শৃঙ্খলার জন্যে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ বলে মনে করেন বোর্ডে কর্মরত সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের মতে অতবড় ঘটনার একটি হলেও প্রথম দৃষ্টান্ত ও শাস্তি ঘোষিত হলো। তবে তারা দুদকের মামলার ফাইনাল রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন। তাহলে অন্তত রাঘব বোয়ালরা ও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যরা ধরা পড়বে।

এদিকে বোর্ডের সাড়ে সাত কোটি টাকা লোপাট হলেও অফিস আদেশে ৯টি চেকে আড়াই কোটি টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ ব্যপারে বোর্ডের সিবিএ নেতা মো. আসাদুজ্জামান বাবলু জানান, অবশিষ্ট টাকার হিসাব যেমন হতে হবে তেমনি, আব্দুস সালাম তার স্বীকারোক্তিতে বোর্ডের যাদের নাম লিখিতভাবে জানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করতে হবে। তার মতে, তা না হলে প্রকৃত অন্য অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।

এদিকে বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হলে তার সঙ্গে দেনা-পাওনা সমন্বয় করে হিসাব মেটাতে হয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত না হলেও প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য বাবদ আব্দুস সালাম ২/৩ লাখ টাকা পেতে পারেন কিন্তু গৃহ ঋণ নেওয়া আছে ১২ লাখ টাকা। যশোর ই-ব্লকে সালামের ২টি ৫ তলা বাড়ি আছে। একটি সম্পূর্ণ অন্যটি নির্মাণাধীন। যদি নেওয়া ঋণ আব্দুস সালাম শোধ না করে তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ মামলা করে আদালতের মাধ্যমে তার বাড়ি বোর্ডের অনুকূলে নিতে পারেন।

সামগ্রিক বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, আড়াই কোটি টাকার ৯ চেকের জালিয়াতিতে আব্দুস সালামের সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যগওলোও সম্পৃক্ত কিন্তু প্রমাণ হয়নি। সে কারণে এটা উল্লেখ করা হয়েছে। আর দেনা-পাওনার হিসাব সম্পূর্ণ করা হয়নি। এখন সে প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে। বোর্ড তার কাছে পেলে আইনগতভাবে তা উদ্ধার করা হবে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যেহেতু দুদকে মামলা রয়েছে তাই এই মুহূর্তে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে সরাসরি ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলা করা যাচ্ছে না। আর দুদক মামলার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিচ্ছে তবে তারা।’

আরও পড়ুন: যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান-সচিবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সারাবাংলা/এমও

টপ নিউজ সরকারি চাকরি স্থায়ী বরখাস্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর